কলার নামে বিক্রি হচ্ছে বিষ!
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাজারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ধারাবাহিক বেচাকেনা চলে। শাক-সবজি, মাছ-মাংসের পাশাপাশি বিক্রি হয় নানা জাতের ফলও।
এসব ফলের সঙ্গে রয়েছে জনগণের নিত্য পছন্দ কলা। কিন্তু পাথরঘাটা বাজারে নাকি কলার নামে বিষ বিক্রি হয়। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
তারা বলছেন, স্থানীয় বাজারে, ভ্যানে, পাড়ার দোকানে বিভিন্ন জাতের কলা বিক্রি হয়। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে টিফিনের সময় কলা কিনে খায়। কিন্তু এসব কথা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিষ দিয়ে পাকানো হচ্ছে এ ফল!
উপজেলায় ফরমালিনযুক্ত কলার ব্যবসা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ ফল খেয়ে স্থানীয়দের মধ্যে লিভার ও কিডনির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শিশুদেরও নানা রোগ হচ্ছে। তাই দ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও ফরমালিন দেওয়া কলা বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
সরেজমিনে পাথরঘাটা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, অলি-গলি, টং দোকান ও ঝুড়িতে করে সবুজ-হলুদ রঙা কলা বিক্রি হচ্ছে। এসব কলার উৎপাদন আসলে কোথায় কেউ জানে না। জানা গেছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় কলায় রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পাকিয়ে বাজারে তুলছেন। অনেকে আবার আড়ত বসিয়েছেন পাকা কলার। কেউ কেউ মজুদ করে রাখছেন।
কিন্তু কলা পচনশীল ফল। পাকা কলা দুই-তিন দিনের বেশি সময় রাখলে পচে যায়। কিন্তু বাজার থেকে কেনা কলা পচে না। বরং দেখতে আরও সুন্দর হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, ফরামালিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে ফল পচতে সময় লাগে। কলা সহজলভ্য এবং জনপ্রিয় একটি ফল। তাই অসাধুরা এটিকে টার্গেট করে বেশি লাভের আশায় রাসায়নিকে পাকিয়ে বাজারে তোলেন।
স্থানীয় একটি সচেতন মহল জানিয়েছে, ট্রাকে করে আড়তদাররা সবুজ কলা নিয়ে আসেন। সকালের মধ্যে ফলগুলো বাজারে চলে আসে। রাত হতেই হলুদ বর্ণ ধারণ করে এসব কলা। আসলে কলার নামে বিষ বিক্রি হচ্ছে। মানুষও এসব বিষ খাচ্ছেন।
পাথরঘাটা আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারিকুল ইসলাম রেজা বলেন, মানুষ কলার নামে বিষ খাচ্ছে। এমন চলতে দেওয়া যায় না। প্রশাসনের উচিৎ আড়ত পরীক্ষা করা।
কলা বিক্রেতারা আবার জানালেন তাদের অসহায়ত্বের কথা। তাদের দাবি, আড়ত থেকে তারা ছড়া হিসেবে কলা কেনেন। বিক্রি করেন হালি বা ডজনে। কলায় কি মেশানো হয় তারা জানেন না। পরিবার চালাতে হবে, তাই ব্যবসা করেন তারা। কলায় ফরমালিনযুক্ত কিনা, তারা নাকি জানেনও না।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনৈতিকভাবে কলা বিক্রির ব্যাপারে বাজার মনিটরিং করার অনুরোধ জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পাথরঘাটা উপজেলা সমন্বয়ক শফিকুল ইসলাম খোকন। কলা পরীক্ষা করে অসাধুদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
পাথরঘাটা কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ফলের পচন রোধে ফরমালিনের চেয়ে ভালো কোনো পদার্থ নেই। অসাধু বিক্রেতারা তাই এ পদার্থের ব্যবহার বেশি করেন অধিক লাভের আশায়। কিন্তু বিষাক্ত এ পদার্থ মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। মূলত এ পদার্থটি মানবদেহের একটি নীরব ঘাতক।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাক্তার সাইফুল হাসান বলেন, জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এখনই ফরমালিনযুক্ত যেকোনো ফল বাজার থেকে তুলে নেওয়া উচিত। বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো এসব ফল খাওয়া আর বিষ খাওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। লিভার, কিডনি, হার্টের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে এসব ফল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এ ব্যাপারে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
বরগুনা জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিপুল বিশ্বাস বলেন, ফরমালিকযুক্ত ফল পরীক্ষার জন্য জেলায় কোনো পরীক্ষাগার নেই। সঠিক তথ্য-উপাত্ত পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।