তদন্ত না করেই শিক্ষিকাকে ‘চরিত্রহীন’ আখ্যা দিয়ে মন্ত্রণালয়ের চিঠি!
দেশ জনপদ ডেস্ক|১৯:২৬, অক্টোবর ১৩ ২০২২ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কোনো ধরনের তদন্ত না করেই বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষিকাকে চরিত্রহীন ও অসৎ আখ্যা দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি শাখা চিঠি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আব্দুস সালাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে এমন আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। সেইসঙ্গে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক অন্যত্র বদলি করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় গত সোমবার চিঠিটি ইস্যু করেছে। বুধবার মন্ত্রণালয়ের এ চিঠিটি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ জাকির হোসেন।
তবে চিঠিতে অভিযোগকারীকে বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ওই নামে কোনো শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটিতে নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে চিঠি পেয়ে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা করেছেন অধ্যক্ষ জাকির হোসেন। ওই সভায় এমন নির্দেশনার নিন্দা জানিয়েছেন কলেজের সব শিক্ষক। একই সঙ্গে তারা এ চিঠি পরিবর্তন করে দ্রুত সংশোধনীর দাবি জানিয়েছেন।
অধ্যক্ষ জাকির হোসেন জানান, উপসচিব স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে তার প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষিকাকে চরিত্রহীন ও অসৎ বলা হয়েছে; যা একেবারে নিন্দনীয়। চিঠির ভাষাগত ব্যবহার আক্রমণাত্মক ছিল। চিঠিতে অভিযোগকারী হিসেবে যাকে উল্লেখ করা হয়েছে ওই নামে কোনো শিক্ষক তার প্রতিষ্ঠানে নেই।
তিনি আরও বলেন, চিঠিতে ওই শিক্ষিকাকে চরিত্রহীন ও অসৎ উল্লেখ করাটা কখনোই মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের কাম্য নয়। উড়ো অভিযোগে একজন শিক্ষিকার সম্মান ক্ষুণ্ন করার অধিকার মন্ত্রণালয়ের নেই। তাই আমরা একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা করে এর নিন্দা জানিয়েছি এবং ওই চিঠি সংশোধনের দাবিও জানিয়েছি।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, আনোয়ার হোসেন নামে একজন ওই শিক্ষিকাকে চরিত্রহীন ও অসৎ বলে অভিযোগ করেছেন। আমরা তার অভিযোগটি তদন্তের জন্য ডিজি অফিসকে চিঠি দিয়েছি। ওই চিঠিতে অভিযোগকারীর অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে ‘অসৎ ও চরিত্রহীন’ লিখেছি। এটা আমাদের ভাষা নয়, অভিযোগকারীর ভাষা।
অভিযোগকারীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগপত্রে বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের খণ্ডকালীন শিক্ষক আনোয়ার হোসেন নামে একজনের নাম উল্লেখ রয়েছে। এর বেশি কিছু নেই।
তদন্ত না করেই একজন শিক্ষিকার বিষয়ে এ ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করা ঠিক হয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে উপসচিব বলেন, যদি এমনটি হয়ে থাকে, তবে আমরা তা সংশোধন করব।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা বলেন, কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত হলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- অভিযোগকারীর অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে। কোনো চিঠির বিষয়ে কখনোই উল্লেখ করা হয় না, অভিযোগকারী কী লিখেছেন। তবে মন্ত্রণালয় যে চিঠি ইস্যু করেছেন; সেখানে সরাসরি আমাকে চরিত্রহীন ও অসৎ তারাই ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে ইস্যুকৃত চিঠির বিষয়ে আমাকে অন্যত্র বদলির নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অভিযোগকারীকে বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কোনো শিক্ষক, শিক্ষিকা বা কর্মচারী কেউই চিনেন না। অথচ তার পরিচয় দেওয়া হয়েছে একই প্রতিষ্ঠানের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। চিঠি ইস্যু করার আগে মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল প্রতিষ্ঠানপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমি লিখিত অভিযোগ দেব।