ইলিশের রাজ্যে ক্রেতাদের মনে হাহাকার

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৫৭, সেপ্টেম্বর ১৯ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সাফায়েত মুনশি বলেন, ‘কোনো ক্রেতা চাইলেই বিএফডিসি থেকে সরাসরি মাছ কিনতে পারবেন না। কারণ এখানে ইলিশ আসার পরই চালানের জন্য ইলিশ কিনে নেন পাইকার আড়তদাররা। কেউ ইলিশ নিতে চাইলে পাইকার ও আড়তদারদের কাছ থেকে কিনতে হবে।’ বলেশ্বর-বিষখালী-পায়রা। মৌসুমে এই তিন নদী ও মোহনায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। স্বাভাবিকভাবে ক্রেতাদের কাছে নদীর ইলিশের চাহিদা প্রচুর। কিন্তু আকাশচুম্বী দামের কারণে বরগুনার বাসিন্দাদের কাছে নিজ এলাকার ইলিশ কিনে খাওয়া দুষ্কর। ক্রেতাদের অভিযোগ, এক শ্রেণির অসাধু মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কারণে ইলিশের এত দাম। দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটার বিক্রয় ও বিপণন কর্মকর্তা মো. রিপন মিয়া জানান, ১২০০ গ্রাম থেকে ১৪০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৩৭৫ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। ১ কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার ১২৫ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া ৭০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায়। এমনকি ৫০০ গ্রাম ওজনের খুদে ইলিশের কেজিও ৮০০ টাকার নিচে নয়। এই দামে ইলিশের আড়তদার ও পাইকাররা কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালান করেন। বিএফডিসি পাইকার সমিতির সভাপতি মো. সাফায়েত হোসেন মুনশি বলেন, ‘বিএফডিসি অকশন শেড থেকে ইলিশ কেনার পর আমরা প্রতি দেড় মণ (৬০ কেজি) ইলিশের আড়তদারি বাবদ ৪০০ টাকা নেই। এরপর চালানের জন্য দেড় মণ ইলিশের জন্য ককশিট প্রস্তুত করতে বরফ, বস্তা ও লেবার খরচা বাবদ মোট ৭০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এরপর পরিবহনে প্রতিটি ককশিটের জন্য খুলনা পাঠাতে ৩০০ টাকা ও ঢাকার জন্য ৪০০ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ বিএফডিসি থেকে কেনার পর প্রতি দেড় মণ ইলিশ চালান করতে প্রায় ১ হাজার টাকা খরচা হয়। এরপর খুলনা বা ঢাকার আড়তে পৌঁছার পর সেখানের আড়তদাররা শতকরা ৩ টাকা কমিশন নিয়ে বাজারে ইলিশ ছাড়েন। কোনো ক্রেতা চাইলেই বিএফডিসি থেকে সরাসরি মাছ কিনতে পারবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ এখানে ইলিশ আসার পরই চালানের জন্য ইলিশ কিনে নেন পাইকার আড়তদাররা। কেউ ইলিশ নিতে চাইলে পাইকার ও আড়তদারদের কাছ থেকে কিনতে হবে। যদি পাইকার বা আড়তদাররা বিক্রি করতে না চান, তবে কেউ কিনে নিতে পারবে না।’ সাফায়েত মুনশি আরও বলেন, ‘কিছু খুচরা পাইকার আড়ত থেকে মাছ কিনে নিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে আড়তদারি কমিশন ও চালানের খরচা হিসাব করে দাম ধরে বিক্রি করা হয়। ফলে স্থানীয় বাজারেও ঢাকা বা খুলনার চেয়ে কম দামে ইলিশ কিনতে পারেন না ক্রেতারা।’ জাহাঙ্গীর জমাদ্দার পাথরঘাটা বিএফডিসি আড়তদার সমিতির সভাপতি। মণপ্রতি ৪০০ টাকা কমিশন নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার না করে তিনি এর পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর লাখ লাখ টাকা ট্রলারে দাদন দিয়ে রাখি। ওই টাকার বিপরীতে আমরা মণপ্রতি ৪০০ টাকা করে আড়তদারি রাখি।’ পাইকার আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্য দামে স্থানীয়রা ইলিশ কিনে খেতে পারে না বলে দাবি জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল খালেকের। তিনি বলেন, ‘তিনটি নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনাসহ এলাকার সব মাছ বিএফডিসি পাথরঘাটায় অবতরণ হয়। বিএফডিসিতে অবতরণ হওয়া ইলিশের একটি অংশ বাধ্যতামূলকভাবে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রির যদি নিয়ম করা হয়, তাহলে এই সমস্যা আর থাকবে না। আমার দাবি, সরকার এই প্রস্তাব অবশ্যই গুরুত্বসহ বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বিএফডিসি পাথরঘাটার ব্যবস্থাপক লে. এম লুৎফর রহমান (বিএন) বলেন, ‘মাছ অবতরণের পর অকশন শেডে নিলাম হয়। পাইকাররা নিলামে ইলিশ কিনে নেয়। আমরা শুধু হিসাব রাখি কত টন ইলিশ অবতরণ হয় ও কত টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। সেই হিসাবে আমরা সরকারের পক্ষে রাজস্ব আদায় করে থাকি। ‘আমরা শুধু এখানে অবতরণ ও বিপণনের কাজ করি, বাজার আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয়। তবে বিএফডিসিতে অবতরণ হওয়া ইলিশের একটি অংশ বাধ্যতামূলকভাবে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রির যদি বিধান করা হয়, তবে স্থানীয় ক্রেতারা ইলিশ ন্যায্যমূল্যে কিনে খেতে পারতেন।’