নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে পদ্মা নামের একটি রোবট। রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে ১১টার দিকে অ্যাডভেন্টিস্ট ইন্টারন্যাশনাল মিশন স্কুলে দুই ভাগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নে উত্তর দেয় রোবটটি।
মানবসদৃশ এ রোবটটি তৈরি করেছে বরিশাল ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের (ইউজিভি) সিএসই এবং ইইই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রোবটটি মানুষের সঙ্গে ধাঁধা খেলতে পারে। বাসা-বাড়ি ও কারখানায় বৈদ্যুতিক গোলোযোগ মেরামতে সাহায্য করতে পারে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে রোবটটি। তবে পদ্মা সেতুকে নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশের জন্য এ রোবটটি তৈরি করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ কারণে রোবটটির নাম রাখা হয়েছে ‘পদ্মা’। রোবটটি পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, পাইলিংয়ের গভীরতা, পিলারের সংখ্যা, স্প্যান সংখ্যাসহ সব ধরনের বিস্তারিত তথ্য বলতে পারে।
পদ্মা রোবট তৈরি প্রজেক্টের প্রধান ও সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, পদ্মা সেতুকে নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের শেষ নেই। সেতু উদ্বোধনের সময় ঘনিয়ে আসলে সিএসই ও ইইই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উদ্বেলিত হয়ে পড়েন। আমাদেরও কিছু করার ইচ্ছে জাগে। পদ্মাসেতুর প্রতি আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশের জন্যই জুন মাসের প্রথমদিকে আমরা এ রোবট তৈরির কাজে হাত দেই। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগেই রোবট তৈরির কাজ শেষ হয়।
জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পদ্মার মূল কাঠামো তৈরি করা হয়েছে উন্নতমানের প্লাস্টিক ব্যবহার করে। সাড়ে চার ফুট উচ্চতার রোবটটির ওজন প্রায় ৮ কেজি। আরডুইনো, মেগা, রাজভেরিপাইসহ বিভিন্ন বোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। প্রায় ৩০ ধরনের সেন্সর ছাড়াও হাত ও মাথা নাড়াচাড়া করতে ব্যবহার করে ছোট আকৃতির ৬ মোটর। তাছাড়া পদ্মার শরীরে আছে অসংখ্য যন্ত্রপাতি। এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা হাজার টাকা।
মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রোবটটি স্বল্প সময়ে তৈরি করা হয়েছে। রোবটকে আরও উন্নত মানের করা সম্ভব। যা মানুষের সাহায্যকারী হিসেবে নানা কাজ করে দিতে পারবে। যেখানে মানুষের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, এমন জায়গায় এ রোবট কাজ করবে। যেমন সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমরা দেখেছি। অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রোবটটি উন্নত করা হলে কোনো কিছু উদ্ধার বা আগুন নেভাতে ব্যবহার করা যাবে রোবট পদ্মাকে। রেস্তোরাঁয় বয় (ওয়েটার) হিসেবে কাজ করতে পারবে পদ্মা। এমনকি ভারী বস্তু উঠানো এবং শিল্পকারখানায় নানা কাজে ব্যবহার করা যাবে রোবট পদ্মাকে।
তিনি বলেন, বিজ্ঞানচর্চায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে পদ্মাকে বিভিন্ন স্কুলে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা রোবটটিকে কাছ থেকে দেখতে পারে। কথা বলতে পারে। শিক্ষার্থীদের রোবোটিকস, ইলেকট্রনিকস, মেকানিকস ও প্রোগ্রামিং বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। বিজ্ঞান প্রসারে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। এটা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটাবে বলে মনে করি।
অ্যাডভেন্টিস্ট ইন্টারন্যাশনাল মিশন স্কুলের প্রিন্সিপাল জন রয় জানান, শিক্ষার্থীদের রোবটিকসের প্রতি ভীষণ আগ্রহ। তারা সামনে থেকে আজ রোবট দেখেছে। ক্লাসে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে রোবটটি শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। শিশুরা বেশ মজা পেয়েছে। তাছাড়া পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে শিক্ষার্থীরা বাড়তি কিছু শেখার সুযোগ হারাচ্ছে।