দুদকের হানার পর পাল্টে গেল শেবাচিমে হাসপাতালের দৃশ্য

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:২১, সেপ্টেম্বর ০৭ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দুদকের ঝটিকা অভিযানে পাল্টে গেছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারদের উপস্থিতির চিত্র। গতকাল মঙ্গলবার সকালে দুদকের ওই অভিযানের আজ বুধবার সকাল ৮টার মধ্যে কাজে যোগদান করেন আন্তঃ ও বহির্বিভাগের বেশিরভাগ চিকিৎসক। অন্যান্য দিন আন্তঃওয়ার্ডে সিনিয়র ডাক্তারদের পরিদর্শন (রাউন্ড) শেষ হতে বেলা ১২ থেকে দুপুর ১ টা লেগে গেলেও আজ রাউন্ড শেষ হয়েছে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে। এতে স্বস্তি ফিরেছে রোগীদের মাঝে। উপলব্ধি হওয়ায় ডাক্তাররা যথা সময়ে অফিস করছেন বলে মন্তব্য করেছেন হাসপাতালের সহকারি পরিচালক। মেডিকেলের ১৭টি আন্ত এবং ১৬টি বহির্বিভাগে ডাক্তাররা বুধবার অফিসে পৌঁছেছেন সকাল ৮টার মধ্যে। অন্যান্য দিন ৯টার পর বর্হিবিভাগে কার্যক্রম শুরু হলেও গতকাল ৮টার দিকেই রোগী দেখতে শুরু করেন ডাক্তাররা। আন্তঃবিভাগেও ৮টার মধ্যে উপস্থিত হন বেশীরভাগ ডাক্তার। আন্তঃওয়ার্ডগুলোতে সিনিয়র ডাক্তারদের রাউন্ড (পরিদর্শন) দিতে দুপুর ঠেকে গেলেও আজ সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে শেষ হয় সব ওয়ার্ডের রাউন্ড। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেন রোগীরা। মেডিকেল কলেজেও আজ যথা সময়ে অফিসে প্রবেশ করেন ডাক্তাররা। তবে বুধবারও ব্যতিক্রমী ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক। এ বিষয়ে জানতে পরিচালকের মুঠোফোনে রিং দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এক দিনের মধ্যে ডাক্তারদের উপস্থিতির চিত্র পাল্টে যাওয়ার রহস্য জানতে চাইলে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ডাক্তারদের হয়তো উপলব্ধি হয়েছে। সে কারণে তারা যথা সময়ে অফিসে এসেছেন। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে বর্হিবিভাগে অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা। আন্তওয়ার্ডে ৮টায় অফিস সময় শুরু হলেও সেখানে সারা দিন কাজ থাকে ডাক্তারদের। এদিকে মঙ্গলবার সকালে অভিযানের সময় দুদক কর্মকর্তারা ডাক্তারদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন অভিযোগ তুলে অসদাচারণের প্রতিকার চেয়ে গতকাল বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন বরিশাল জেলা শাখা। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোন হয়রানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে স্মারকলিপিতে। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র থেকে জুনিয়র সকল স্তরের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রাইভেট প্রাকটিসের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কোন কোন সিনিয়র চিকিৎসক সপ্তাহেও একদিন মেডিকেলে অফিস করেন না বলেও অভিযোগ আছে। আবার অফিসে গেলেও হাজিরা দিয়ে সটকে পড়েন প্রাইভেট চেম্বারে রোগি দেখতে এমনটাও জানা যায়। মঙ্গলবার সকালে দুদকের অভিযানেও তার প্রমাণ মিলেছে। ওইদিন সকালে আন্তঃ ও বর্হিবিভাগে কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎক ছাড়া মিড লেভেল কিংবা কোন সিনিয়র চিকিৎসকে যথা সময়ে অফিসে পাননি দুদক কর্মকর্তারা। হাসপাতালের পরিচালক এবং কলেজের অধ্যক্ষকেও দপ্তরে পাননি তারা। নির্ধারিত সময়ের পর অফিসে পৌঁছা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে দুদক কর্মকর্তারা ফিঙ্গার বায়োমেট্রিক হাজিরার প্রিন্ট কপি চাইলেও তা দেননি তিনি। এ নিয়ে বাদানুবাদ হয় উভয় পক্ষের মধ্যে। এ নিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যহারের অভিযোগ তোলেন ডাক্তাররা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) জেলা শাখা মঙ্গলবার দুপুরে জরুরি সভা করে বিক্ষোভ করেন মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে। ৫শ’ শয্যার মেডিকেলে ২২৪টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৫০ জন এবং মেডিকেল কলেজে ২৯১ জন ডাক্তারের স্থলে কর্মরত আছেন ১২২ জন।