এম এইচ মাহমুদ ॥ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বরিশাল জেলা কার্যালায়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ (অ.দা.) এর বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভুত ভাবে প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন ও ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিসিকের নিবন্ধন পাওয়ার পূর্বশর্ত হলো উদ্যোক্তার বৈধ ট্রেড লাইসেন্স থাকা। বৈধ ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াও বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। এসব নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে জালিস মাহমুদ পাইকারী দরে বিসিকের নিবন্ধন বিক্রি করেছেন।
বিসিক শিল্প নিবন্ধনের নিয়ম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৪ টি শ্রেণিতে বিসিক নিবন্ধন দিয়ে থাকে কুটির শিল্প, মাইক্রো শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প, মাঝারি শিল্প। কুটির শিল্পের নিবন্ধন পেতে হলে মূলধন প্রয়োজন ১০ লক্ষ টাকা। বিসিক থেকে শত শত ফেসবুক উদ্যোক্তাদের যে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেরই ১০ লক্ষ টাকা মূলধন নেই।
নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ভিতরে বৈধ ট্রেড লাইসেন্স, ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র, নাগরিক সনদ দরকার। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে যে নিয়ম রয়েছে তার প্রধান বিষয় টা না মেনে তারা নিবন্ধন দিচ্ছে শুধু ছবি আর জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে। যাদের নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে কারোরই দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই, তবুও তারা পেয়েছে বিসিক নিবন্ধন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিবন্ধিত উদ্যোক্তাদের ভিতরে ফেসবুক পেইজ খুলে ঢাকা থেকে কসমেটিক, গার্মেন্টস পণ্য পাইকারীতে কিনে এনে বরিশালে বিক্রি করেন, ঘরে হোমমেড খাবার তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করেন।
ঋণ বিতরণে অনিয়মের কিছু চিত্র তুলে ধরা হলোঃ একজন সিগারেট কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভ ভূয়া লিমিটেড কোম্পানির মালিক হয়ে বিসিক ডিজিএম জালিস মাহমুদের কাছ থেকে বিসিকের নিবন্ধন নিয়েছেন। ভূয়া প্রতিষ্ঠানে বিসিকের নিবন্ধন নিয়ে করোনাকালীন সময়ে আব্দুল কাদের সুরুজ বিশেষ প্রনোদনার ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন৷ এ কে এস কনজ্যুমার প্রডাক্টস লিঃ স্বত্বাধিকারী আবদুল কাদের সুরুজ বিসিক নিবন্ধন নম্বর: ১০০৬৫১ এর বৈধ ট্রেড লাইসেন্সও নেই এমনকি প্রতিষ্ঠানের কোনো অফিস এবং কোনো ঠিকানাও নেই।
ফুল কুমারী ফ্যাশন হাউজ স্বত্বাধিকারী গাজী মেহরীন জুই বিসিক নিবন্ধিত উদ্যোক্তা অথচ তার নেই কোন বৈধ ট্রেড লাইসেন্স। ডিজিএম এর আস্থাভাজন হবার কারণে ভাগিয়ে নিয়েছেন ২ লক্ষ টাকার ঋণ।
ভেনাস বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী সালমা আক্তার। তার রয়েছে আটা-ময়দা দিয়ে রূপচর্চা করানোর বিশেষ খ্যাতি, শুধুমাত্র জালিস মাহমুদের প্রিয় হওয়ায় তিনি ৩ লক্ষ টাকা ঋণ পেয়েছেন পার্লার দিয়ে।
তথ্যসূত্রে জানাযায়, করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত বিসিকের বিশেষ প্রনোদনা লোন বিতরনের ব্যাপারে কোনো শর্ত পালন করা হয় নাই। প্রণোদনার ঋণ পাওয়ার দাবীদার পুরাতন ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা। কিন্তু তাদের না দিয়ে বিসিকের ডিজিএম জালিস মাহমুদ নিজের পরিচিত লোকদের স্বজনপ্রীতি ও বিসিক উদ্যোক্তা পরিবারের এডমিনদের বিশেষ ঋন সুবিধা দিয়েছেন। বেশিরভাগ ঋণগ্রহীতার কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। ভুয়া বিসিক নিবন্ধন করে প্রনোদনা ঋণ দেওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন বিসিক শিল্প নগরীর প্রকৃত উদ্যোক্তারা।
অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, যেখানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা উৎপাদন মুখী ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কেউ বিসিক লাইসেন্স পাবার কথা না। সেখানে ডিজিএম জালিস সাহেব নকল প্রসাধনী বিক্রেতাদের বিনা কাগজপত্রে স্বজনপ্রীতি করে লাইসেন্স দিয়ে বিসিকের নিবন্ধন ভুক্ত উদ্যোক্তা বানিয়ে দিচ্ছে৷ তাহেরা সিদ্দিকী একজন বিসিক লাইসেন্সধারী নকল প্রসাধনী বিক্রেতা। বিসিক লাইসেন্স নম্বর: ৫১২৫। নকল প্রসাধনী, ত্বকের ক্ষতিকর কসমেটিকস বিক্রেতাদের বিসিক উদ্যোক্তা নিবন্ধনের মাধ্যমে ডিজিএম জালিস মাহমুদ পন্য বিক্রির বৈধতা দিয়ে দিয়েছেন।
বৈধ ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া নিবন্ধনকৃত কিছু উদ্যোক্তার চিত্র তুলে ধরা হলোঃ হৃদয় ছোঁয়া হস্তশিল্প, স্বত্বাধিকারীঃ নাজনীন আক্তার অনিমা তার কোন বৈধ ট্রেড লাইসেন্স নেই তার পরেও তাকে দেওয়া হয়েছে বিসিক নিবন্ধন।
ফ্যামিলি বাজার স্বত্বাধিকারী মোশাররফ হোসেন। একজন মুদির দোকানদারকে তিনি উদ্যোক্তা বানিয়ে নিবন্ধন দিয়েছেন।
দি ইজি ফ্যাশন হাউজ স্বত্বাধিকারী আসমা আক্তার তিনি একজন গার্মেটস পণ্য বিক্রেতা দোকানী, তাকে উদ্যোক্তার খেতাব দিয়ে দেওয়া হয়েছে বিসিক নিবন্ধন।
উল্লেখ্য, যে বিনা কাগজপত্রে শত শত উদ্যোক্তাদের বিসিক নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। যাদের অধিকাংশের নেই কোনো বৈধ ট্রেড লাইসেন্স এবং ঋণ দেওয়া ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে বিসিক বরিশালের জালিস মাহমুদ (অ.দা.) জানান, আমি কোন ধরনের অনিয়ম করি না। যাদের নিবন্ধন পত্র দেওয়া হয়েছে তাদের বৈধ মাধ্যমেই দেওয়া হয়েছে। আর ঋণ বিতরণেও কোন অনিয়ম হয়নি।