যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে বঙ্গমাতা সেতু

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:৪৬, সেপ্টেম্বর ০৫ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুটি। পিরোজপুর-১ আসনের এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ওই সেতুর প্রথম টোল প্রদানকারী হিসেবে টোল দিয়ে পিরোজপুরের কুমরিমারা প্রান্তর থেকে কাউখালীর বেকুটিয়া প্রান্তরে যান। রোববার (০৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা এক মিনিটের সময় মন্ত্রীর গাড়িসহ প্রতিটি গাড়ির টোল হিসেবে ৩৩০ টাকা দিয়ে সেতুটি পার হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. জাহেদুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. সাঈদুর রহমানসহ স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের ব্যক্তিরা। একই সময় কাউখালীর বেকুটিয়া প্রান্তর থেকে সেতুটি পার হন পিরোজপুর-২ আসনের এমপি জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পরে তিনি পিরোজপুরের কুমিরমারা প্রান্তরে টোল দেন। পরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিং-এ বলেন, অবহেলিত দক্ষিণের এ জনপদের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে এ সেতুটি একটি মাইল ফলক। আর এ মাইল ফলকের একমাত্র নির্মাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেননা, শেখ হাসিনার উদ্যোগেই আজ এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি যখনই ক্ষমতায় আসেন তখনই দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ এখানের মানুষের সার্বিক কল্যাণের চেষ্টা করেন। তাই দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের উন্নয়নে আবারও আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।   এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবভন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সেতুটির উদ্বোধন করেন। জানা গেছে, গত ২০০০ সালে পিরোজপুর সরকারি বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কচা নদীর বেকুটিয়া অংশে অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুটি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর তিনি বেকুটিয়া পয়েন্টে এ সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ওই বছর ‘চায়না রেলওয়ে ১৭তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আওতায় ‘চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ রিকোনিসেন্স ডিজাইন ইনস্টিটিউট’ ওই সেতুটি নির্মাণ করে। গত ৭ আগস্ট চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর উপস্থিতিতে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ইকনোমি মিনিস্টার বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সচিবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি হস্তান্তরের দলিল স্বাক্ষর করেন। ৯টি স্প্যান ও ১০টি পিলার বিশিষ্ট এবং ৯৯৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৩ দশমিক ৪০মিটার প্রস্থের ওই সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি চীন এবং ২৪৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার যোগান দিয়েছে। ৪২৯ মিটার ভায়াডাক্ট সহ ডাবল লেনের সৈতুটির দৈর্ঘ্য ১৪২৭ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। সেতুটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া অংশ ও পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমিরমারা প্রান্তে স্থাপন করা হয়। কচা নদীর বেকুটিয়া অংশে সেতুটি স্থাপন করায় এর নাম প্রথমে বেকুটিয়া সেতু বলা হলেও পরে স্থানীয়দের দাবির মুখে এর নাম দেওয়া হয় বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। সেতুটি খুলে দেওয়ার ফলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের দ্বার উম্মুক্ত হয়েছে। এ অঞ্চলে ফেরি যুগের অবসান হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি চালু হওয়ায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে খুলনা হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের বরিশাল, কুয়াকাটা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার স্বপ্নের দুয়ার খুলে গেছে। এর ফলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে একটি বিশাল পরিবর্তন আসবে বলে দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুই বিভাগকে এক করে দিয়েছে। সড়ক পথে এ দুই অঞ্চলের ১৬টি জেলার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ও যা সুযোগ তৈরি হয়েছে।