প্রথম সারির পর্যটন স্পট হতে পারছে না ভাসমান পেয়ারা বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিখ্যাত ভীমরুলী ভাসমান হাটে শিক্ষা সফরে এসেছেন পিরোজপুর জেলার তেজদাসকাঠি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন পরিবারের সদস্যদেরও। কিন্তু এসেই বিপাকে পড়েছেন শখানেক শিক্ষার্থী ও স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে।
তার অভিযোগ, তিন শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী পেয়ারার বড় মোকাম এই ভীমরুলী। প্রতিবছরই দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনায় মুখর থাকে ভাসমান এই পেয়ার হাট। অথচ এখানে নেই কোনো আবাসন ব্যবস্থা। নেই কোনো পরিষ্কার মানসম্মত শৌচাগারের ব্যবস্থা।
নেই গাড়ি কিংবা নৌযান পার্কিং ব্যবস্থা। এখানে এসে মুগ্ধতার পরিবর্তে বিরূপ ধারণা নিয়ে ফেরেন দূর থেকে আসা দর্শনার্থীরা। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রথম সারির পর্যটন স্পট হয়ে উঠতে পারছে না এশিয়ার অন্যতম এই ভাসমান হাট।
এই অধ্যক্ষের মতে, দক্ষিণাঞ্চলের এ এলাকাকে উন্নয়ন করা সম্ভব এবং সরকারের বিশেষ ব্যবস্থায় একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে এ অঞ্চলে রাত যাপনের জন্য আবাসন ব্যবস্থা, খাবার হোটেল ও মানসম্মত শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে পারলে আরও বেশি পর্যটক টানাও সম্ভব এখানে। আমরা সড়ক ও নৌপথে আসতে পারলেও গাড়ি বা নৌযান পার্কিং ব্যবস্থা নেই এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের কোনো জায়গা নেই।
তিনি বলেন, পেয়ারার মৌসুম যেহেতু তিন মাস, এজন্য বেসরকারিভাবে কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না। তাই সরকারকেই এ বিনিয়োগে উদ্যোগী হতে হবে। পদ্মা সেতু চালু হয়েছে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হলে আরও দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসবে।
এতে সরকার যেমন লাভবান হবেন, এই দক্ষিণাঞ্চলের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রটি ঘিরে লাভবান হবেন স্থানীয় মানুষও। সচল হবে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা, ঘুরবে এখানকার মানুষের ভাগ্যের চাকাও।
এখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তাই এখানে মুক্তিযুদ্ধের একটি বিশাল ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় বাজার ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে হবে।
নড়াইল থেকে ৯টি মোটর বাইকে করে ১৮ জন যুবক আসেন এ ভাসমান পেয়ারার হাট দেখতে। এদের মধ্যে টিম পরিচালনাকারী শাহজাহান মৃধা জানান, এশিয়া মহাদেশে থাইল্যান্ডের পরে আমাদের বাংলাদেশে এখানেই একমাত্র ভাসমান পেয়ারা বাজার। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টন পেয়ারা দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
বাজারটা অনেক সুন্দর। অথচ এখানে আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই, নেই গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, ভ্রমণের জন্য ডিঙি নৌকারও সঙ্কট রয়েছে। সরকার বা জনপ্রতিনিধিরা যদি এসবের ব্যবস্থা করেন তা হলে এখান থেকেও প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারেন। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় এসব আয় বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
রাজধানীর ওয়ারী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা তুলশী আক্তার। জীবনে প্রথমবার ঝালকাঠির ভীমরুলীতে এসেছেন পেয়ারার ভাসমান হাট দেখতে। তুলশী জানান, ফেরি বিড়ম্বনার কারণে এত বছর আসা হয়নি।
এখন ফেরি না থাকায় ভোর ৪টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে ভীমরুলীর উদ্দেশে রওনা দিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গন্তব্যে পৌঁছেছি।
এমন একটি ভাসমান বাজার আমাদের বাংলাদেশে আর নেই। এখানে এসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। কতটাই যে ভালো লাগছে তা বলে শেষ করতে পারব না। কিন্তু বিপত্তি রয়েছে ওয়াশ রুমের। যে কটি আছে তা এত গণভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে যার ফলে চরম নোংরা অবস্থায় রয়েছে।
রুচিশীল মানুষের ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী এসব শৌচাগার। ঝালকাঠি সদর উপজেলা, বরিশালের বানারীপাড়া, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার ৫৫ গ্রাম জুড়ে রয়েছে পেয়ারা রাজ্য। তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ পেয়ারা অঞ্চলে প্রতিবছরের চেয়ে এ বছর পর্যটকদের আগমন অনেক বেশি। কারণ, স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
এ ব্যাপারে ভীমরুলী ভাসমান বাজার কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভবেন্দ্রনাথ হালদার বলেন, পর্যটক আসায় স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থান হচ্ছে। তবে এখানে থাকার জন্য হোটেল বা মোটেল নেই। আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় পেয়ারা বাগানগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে উল্লেখ করে বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. ওয়াহেদুর রহমান বলেন, পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে এবং পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।