খোঁজ মিলল নিখোঁজ হওয়া করোনা আক্রান্ত নারীর

কামরুন নাহার | ২০:৫৮, এপ্রিল ১৩ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিকালে জানা গেল তার রিপোর্ট পজেটিভ। সব মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কিন্তু গৌরনদী থেকে স্থানীয় প্রশাসন বা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা রহস্যজনকভাবে নিরাবতা পালণ করতে থাকেন। অপর দিকে সংবাদটি জানতে পেরে টরকি এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। কিন্তু স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ধরণের কোন রোগি নেই। তার বাড়িতেও তাকে কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত জানা গেল বৃদ্ধা নাকি পালিয়ে ঢাকা চলে গেছে। আক্রান্ত ওই নারীর বয়স ৬০। তার বাড়ি গৌরনদী উপজেলায়। উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তিনি। করোনার বিষয়টি গোপন করে বর্তমানে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী। সোমবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আমরুল্লাহ। তিনি বলেন, আক্রান্ত ওই নারীর বাড়ি গৌরনদী উপজেলায় হলেও বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন। গত সপ্তাহে স্বামীর সঙ্গে ঢাকা থেকে গৌরনদীর বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। বাড়িতে আসার পর তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর স্বামী-স্ত্রী নমুনা পরীক্ষার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। পরে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ১১ এপ্রিল আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। পরীক্ষার পর আইইডিসিআর থেকে সোমবার বিকেলে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টে ওই নারীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তবে ওই নারীর স্বামীর করোনা নেগেটিভ এসেছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাইয়্যেদ আমরুল্লাহ বলেন, তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন না। শুধু নমুনা পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ১১ এপ্রিলের পর ওই দম্পতি কাউকে কিছু না জানিয়ে গৌরনদী থেকে ঢাকায় মেয়ের বাসায় চলে যান। রিপোর্ট পাওয়ার পর ওই দম্পতির মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। মেয়ের জামাই জানান তার শাশুড়ি আগে থেকেই অ্যাজমায় আক্রান্ত। ঢাকায় এসে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার শাশুড়ি। গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, আক্রান্ত নারীর মেয়ের জামাইকে করোনার বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাকে আরও বলা হয়েছে বিষয়টি যেন গোপন না করা হয়; জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি হাসপাতালের চিকিৎসকদের জানাতে বলা হয়েছে তাকে। আমরুল্লাহ বলেন, আক্রান্ত ওই নারী বারডেম হাসপাতালে ভর্তি থাকার বিষয়টি সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস রিপোর্ট পাওয়ার পর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই নারীর বিষয়ে আইইডিসিআরকে অবহিত করা হয়েছে। তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছি ঢাকায় যাওয়ার আগে ওই নারী উপজেলার টরকিবন্দরে আলম ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। ওই ক্লিনিক, রোগীর গ্রামের বাড়ি ও যে অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে তা লকডাউন করা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, জেলায় রোববার (১২ এপ্রিল) পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগী ছিলেন দুজন। সোমবার জেলায় আরও একজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। সোমবার শনাক্ত হওয়া ওই নারীর বাড়ি গৌরনদী উপজেলায়। রোববার শনাক্ত হওয়া একজনের বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। তার বয়স ৬৫ বছর। অপরজনের বাড়ি মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায়। তার বয়স ৬০ বছর। এদিকে, রোববার দুজন শনাক্ত হওয়ার পরপরই বরিশাল জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করা হয়েছে।