করোনা আতঙ্কেও থেমে নেই মেহেন্দিগঞ্জের বালু খেকোরা

কামরুন নাহার | ১৯:৫৭, এপ্রিল ১৩ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস আতঙ্কে থমকে আছে গোটা বিশ্ব। এই মহামারী থেকে রক্ষা পেতে প্রস্তুতির কমতি নেই বাংলাদেশে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় বরিশালেও প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু এই আতঙ্কের মধ্যেও থেমে নেই বালু খেকোরা। করোনা নিয়ে প্রশাসনের ব্যস্ততাকে কাজে লাগিয়ে নিরবে বিভিন্ন নদী থেকে বালু চুরির মহাউৎসবে মেতেছে তারা। এমনই একটি অভিযোগের বাস্তব প্রমাণ মিলেছে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার লতা নদীতে। উপজেলা প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে কাটা হচ্ছে বালু। যা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। তবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। অপরিকল্পিত ড্রেজিং এর কারণে যে কোন সময় বড় ধরনের ভাঙ্গন শুরু হতে পারে ওই ড্রেজিং এলাকায়। অভিযোগ উঠেছে আর কেউ নয় মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই এই বালুচুরি চক্রের সাথে জড়িত। আর একারণেই নীরব ভূমিকায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। যদিও চোরাই বালু বিক্রির টাকার একটি অংশের ভাগ তারাও পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত লতা নদীতে দীর্ঘ ২ বছর ধরে চলছে অবৈধ ড্রেজিং এর ব্যবসা। নদী ভাঙ্গলী এই এলাকায় দিনের পর দিন ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু কেটে তা বিক্রি করা হচ্ছে নদী বেষ্টিত মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। স্থানীয় সুত্র জানায়, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু কাটা একটি ড্রেজার দিয়ে স্থানীয় ৯ আওয়ামীলীগ নেতারা ব্যবসা করছেন। ড্রেজারটির মূল পরিচালনার দায়িত্বে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই মিজান সরদার ও তার সহযোগী মান্না খান। তাছাড়া খোদ উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম মাহফুব উল আলম লিটন নিজেও ওই ড্রেজারের ব্যবসায়িক অংশিদার। তার এবং আন্ধারমানিক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের ক্ষমতাবলে গত দুই বছর ধরে একই স্থানে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু কাটা হচ্ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রশাসন বাধা দিচ্ছে না। সূত্রগুলো আরো জানায়, মাসখানেক পূর্বে লতা নদীর ওই এলাকাই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিজুস চন্দ্র দে। এসময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সেখানকার দুটি অবৈধ ড্রেজার পুড়িয়ে দেন তিনি। ড্রেজার দুটির মালিক ছিলেন স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা। কিন্তু একই স্থানে দীর্ঘ দুই বছর ধরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালুর ব্যবসা করলেও আওয়ামীলীগ নেতাদের পরিচালিত ড্রেজার বন্ধ বা এর বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এমনকি বর্তমানে করোনা ইস্যুকে সামনে টেনে এনে অবৈধভাবে ড্রেজিং ব্যবসার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামীলীগ নেতাদের অবৈধ ড্রেজিং ব্যাবসার লভ্যাংশ থেকে মাসহারা পাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। এ কারণেই লতা নদী থেকে বালু কাটতে বাঁধা কিংবা অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না তারা। এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম মাহফুল উল আলম লিটন এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিজুস চন্দ্র দে। তিনি বলেন, ‘আমার উপজেলার অন্তর্গত কোন নদীতে বালু মহল নেই। তাই আমি দায়িত্ব গ্রহনের পরে সম্প্রতি আমি নিজেই অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি। এসময় দুটি ড্রেজারের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইণানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। আর যেটা সামনে পাইনি সেটার বিরুদ্ধে কিভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায় বলে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন তিনি। এই মুহুর্তে অবৈধভাবে লতা নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম চললেও কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে আমরা করেনা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যস্ত। কিভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই এই মুহুর্তে অন্য কোন বিষয় নিয়ে ভাববার সুযোগ নেই বলে এড়িয়ে যান উপজেলা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।