বাকেরগঞ্জে দুর্নীতি ও অনিয়মে ধুঁকে ধুঁকে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০০:৪৫, আগস্ট ১৪ ২০২২ মিনিট

মোঃ বশির আহাম্মেদ, বাকেরগঞ্জ ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত হয়ে কোন রকম ধুঁকে ধুকেঁ চলছে সেবা কার্যক্রম। প্রায় সকল যন্ত্রপাতি রহস্যজনক কারণে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যা-ও দু-একটি চলছে তাও ব্যবহারে চলছে চরম অনিয়ম। আউটডোর আয়ের অর্থ সরকারি কোষাগারে নামেমাত্র জমা দিয়ে বাকি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়া হিসাবের সঙ্গে ল্যাব, টিকিট কাউন্টার, ইমারজেন্সি ও অ্যাম্বুলেন্সের আয়ের বাস্তব হিসাবের সমন্বয়ে রয়েছে আকাশ-পাতাল গরমিল। অভিযোগ উঠছে, ল্যাব টেকনিশিয়ান মার্জান আফরিন, অ্যাম্বুলেন্স চালক বাদল, টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত দেবশ্রী বিশ্বাস, ক্যাশিয়ার বীনা রানীদের বিরুদ্ধে। এদের সিন্ডিকেটে বছরে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয় থেকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ল্যাব টেকনিশিয়ান মার্জান আফরিন ল্যাব দিয়ে বছরে কয়েক লাখ টাকা আয় করলেও সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এছাড়াও বেসরকারি ক্লিনিকের সঙ্গে তার রয়েছে অঘোষিত চুক্তি। যা দিয়েও তিনি বছরে আয় করছেন কয়েক লাখ টাকা। এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ রোগী। অন্য দিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছেন রাজস্ব থেকে। টিকিট কাউন্টারেও চলছে দেবশ্রী বিশ্বাসের একক আধিপত্য। এক নামে একাধিক টিকিট, ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছে টিকিট বিক্রয়, খুচরা টাকার কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে রোগীদের কাছ থেকে ৩ টাকার পরিবর্তে ৫ থেকে ১০ টাকা আদায় করে ভূয়া হিসাব দেখিয়ে লুটপাট করছেন লাখ লাখ টাকা। অ্যাম্বুলেন্স আয়েও রয়েছে গরমিল। কিলোমিটার প্রতি ২০ টাকা নির্ধারিত হলেও বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের দূরত্ব ২০ কি.মি.। কিলোমিটার হিসাবে ভাড়া আসে ৪শ’ টাকা। কিন্তু এ রুটে কন্ট্রাক্টে অ্যাম্বুলেন্স চালক বাদল ভাড়া আদায় করছেন ১ হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা । এছাড়াও ইমারজেন্সিতেও বকশিশের নামে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বছরে কয়েক লাখ টাকা। রোগী ভর্তির টাকায়ও রয়েছে গরমিল। সম্প্রতি সরেজমিন আউটডোর আয়ের হিসাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন বীনা রানী দে। এ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবেও ভূয়া ভাউচার দিয়ে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়দের ধারণা, লুটপাটের মহা উৎসবের ঘটনা ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় আয়ের হিসাব দিতে গড়িমসি করছেন ক্যাশিয়ার বীনা রানী দে। এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবত এসে আল্ট্রসনোগ্রাম মেশিন, এমারজেন্সি রুমের জেনারেটর আইপিএস নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও মেরামত নেই কোন প্রচেষ্টা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮-১০ জন ডাক্তার থাকলেও রোগীদের সেবা দিচ্ছেন মাত্র হাতে গোনা দু’একজন। সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা দেড় টায় পরে নতুন ভবনের দুপাশ দিয়েই মুল ফটকের কেসিগেট তালাবদ্ধ। পুরাতন ভবনের ফটক খোলা থাকলেও এমারজেন্সি ডাক্তার ব্যতিত নেই কোন ডাক্তার। হাতে গোনা দু’তিন জন নার্স ও ব্রাদার দিয়েই চলছে রুগীদের সেবার কার্যক্রম। আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও ( চলতি দায়িত্ব) ডাক্তার ফজলে রাব্বি সার্বক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা থাকলেও তিনি সকাল ১০টায় এসে দুপুর ১টার ভিতরেই বরিশালে চলে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কলসকাঠি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে তার রয়েছে একাধিক ফার্মেসীতে ভিজিটিং চিকিৎসা বাণিজ্য। এ বিষয় আবাসিক চিকিৎসক ডাক্তার ফজলে রাব্বি মুঠোফোনে জানান, তিনি আরএমও নন কিন্তু কথার এক পর্যায়ে সত্যতা স্বীকার করেন। বরিশাল কখন গিয়াছেন এমন প্রশ্নের জবাবে জানান, দুপুর ২:৩০ মিনিটে বরিশালে চলে গেছেন এবং রাতে ফিরবেন না। চিকিৎসা সেবা না দিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতাল ত্যাগ করার কারণ জানতে চাইলে কোন সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এছাড়া হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা বিভিন্ন রোগীদের ডাক্তারের চিকিৎসার প্রত্যয়ন দেয়ার নামে ১ থেকে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দুধল ইউনিয়নের আফরোজা বেগম ও তার ছেলে ডাক্তারের চিকিৎসা প্রত্যয়ন নিতে আসলে দুজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে দিতে হয় টাকা। মজার বিষয় হলো ডাক্তার রুগীকে না দেখেই চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মাধ্যমে প্রত্যয়ন দিয়ে দিচ্ছেন রুগীকে। এছাড়াও উপজেলার পৌর শহর ও গ্রামগঞ্জে অবৈধ ক্লিনিক ও ডেন্টাল ক্লিনিক থেকে মাসওয়া আদায় করছেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা। এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা ড্রাগ এন্ড কেমিস্টি ও পল্লী চিকিৎসকের সভাপতি মিজান মল্লিক জানান, একাধিক ডাক্তার ও ব্রাদাররা বিভিন্ন ক্লিনিকে শেয়ার থাকায় প্রায় সকল রুগীকে বাহিরে টেস্ট করানো হয় এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা বিভিন্ন ডেন্টাল ক্লিনিক থেকে টাকার বিনিময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের খবর পৌঁছে দিয়ে তাদের রক্ষা করে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি আবুজর মোঃ ইজাজুল হক সংবাদমাধ্যমকে জানান, আমরা উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার অবৈধ ক্লিনিক ও ডেন্টাল ক্লিনিক-কে মোবাইল কোর্টের আওতায় আনার চেষ্টা করলেও অজানা কারণে অভিযানের পূর্বেই বেশিরভাগ ডেন্টাল ক্লিনিক বন্ধ করে পালিয়ে যায়। তাই দু’চার টিকে আইনের আওতায় আনলেও বেশির ভাগই থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়মের সুযোগ নেই অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। এক্স-রে, জেনারেটর ও আইপিএস মেশিন দীর্ঘদিন যাবত নষ্ট হয়ে পড়ে থাকার বিষয়ে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।