রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ বেটউইনার নিউজ নিয়ে জলঘোলা, রুদ্ধদ্বার বৈঠক; বিসিবি সভাপতির দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন, সাথে কয়েক দফা হুঁশিয়ারি। নানা ঘটন-অঘটনের পর সাকিব আল হাসানের সুবোধ ফিরেছে। বিসিবির চিঠির জবাবে সাকিব জানিয়েছেন, তিনি বেটউইনার নিউজের সাথে চুক্তি বাতিল করছেন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এ সংক্রান্ত পোস্ট সরাবেন এবং জাতীয় দলে হয়ে মনপ্রাণে খেলবেন।
এমন প্রতিশ্রুতি সাকিব আল হাসান আগেও দিয়েছেন, জানিয়েছেন কয়েকবার তিনি তিন ফরম্যাটেই খেলবেন। আর এসব প্রতিশ্রুতি প্রতিবারই সাকিব দিয়েছেন নানা ইস্যুতে বিসিবি বিশেষ করে সংস্থাটির বস পাপনকে তাঁতিয়ে দেওয়ার পর। তবে বিসিবিও যে দুধের ধোয়া তুলসী পাতা কিংবা ভাজা মাছটি উল্টে খায়নি কখনো, জোর তেমনটা বলার উপায় নেই। দেশে যারা ক্রিকেটের খোঁজ খবর রাখেন, তারা ভালো করেই জানেন, সাকিবদের এমন ‘বেপরোয়া’ হয়ে ওঠার পেছনে বিসিবিরও যথেষ্ট দায় আছে। অনেকে বলেন, ‘সাকিবরা জেনে গেছেন বিসিবির দৌড় আসলে কতো দূর?’
এবারও অনেকে দেখছেন বিসিবি বা পাপন বনাম সাকিব যুদ্ধে সাকিব জয়ী হয়েছেন। অনেকে আবার নানা মাধ্যমে বলছেন, চাপের মুখে সাকিবই পরাজয় মেনে নিয়েছেন।
তবে এই জয় পরাজয়ের মাঝেই আরেক দল অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তারা দাবি করছেন, সাকিব বিসিবির এই দ্বন্দ্বে আসলে জয়ী হয়েছে বেটউইনার নিউজ বা সোজা কথায় জুয়ার সাইট বেটউইনার। কারণ, দেশের অধিকাংশ মানুষ এমনিক খেলাভক্তরাও বেটউইনারের নাম এতোদিন জানতো না। তবে সাকিবের এমন কাণ্ডে এখন সবাই জানে, বেটউইনার নামে কিছু একটা আছে। ফলে বেটইউনারের ফায়দা হাসিল, তাদেরই উইন উইন সিচুয়েশন।
বেটউইনারের সাথে সাকিবের চুক্তি বৈধ কি অবৈধ সেই আলাপে যাওয়ার আগে আরেকটা আলাপ জরুরি। কারণ, সাকিব তো আগেই নিয়ম ভেঙেছেন। বিসিবির অধীনে খেলা ক্রিকেটারদের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হওয়ার আগেই বিসিবির অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। অথচ সাকিবের গোড়াতেই ছিল গলদ, বিসিবিকে তিনি এই চুক্তির বিষয়টি জানানোর প্রয়োজনই বোধ করেননি। সেই এক ‘নিয়মভঙ্গের’ অভিযোগেই সাকিবকে অভিযুক্ত করে শাস্তির মুখোমুখি করতে পারত বিসিবি।
তবে এবারই নয় এমন কাণ্ড সাকিব আগেও ঘটিয়েছেন। ২০১৯ সালেও সাকিব বিরুদ্ধে উঠেছিল একইরকম অভিযোগ। তখন বিসিবি দাবি করেছিল, তাদের না জানিয়েই একটি মুঠোফোন সেবাদাতা কোম্পানির সাথে সাকিব চুক্তি করেছিলেন। অথচ তখনকার নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় দলের চুক্তিতে থাকা অবস্থায় কোন টেলিকম কোম্পানির সাথে ক্রিকেটারদের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার নিয়ম ছিল না। তখনও পাপনের বোর্ড ঘোষণা দিয়েছিল, সাকিবকে তারা কোন ছাড় দেবে না।
২০১৯ সালেই জুয়াড়ির দেওয়া ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর সেটা গোপন করার অভিযোগে সাকিবকে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। তবে বিশেষ শর্তে সাকিবের সাজা এক বছর স্থগিত রাখা হয়েছিল।
সাকিব সেবার আইসিসিকেও কথা দিয়েছিলেন তিনি এমন ভুল আর করবেন না। সাথে ক্রিকেট ভক্তদের দিয়েছিলেন ভবিষ্যতে সবটুকু শুধরে নিজেকে খেলায় উজাড় করে দেওয়ার আশ্বাস।
সেই কথা মনে করিয়েই ক্রিকেট বিশ্লেষক আর ভক্তদের একটা অংশ বলছে, সাকিব আসলে ভুল থেকে শিখতে পারেননি। পারলে বেটউইনার নিউজের নাম করে জুয়া সংশ্লিষ্ট কিছুতে তিনি জড়াতেন না।
সাথে সাকিব আর বিসিবির এই দ্বৈরথও অনেকের কাছে ভালো কিছু নয়। ক্রিকেটকে যারা ভালোবাসেন তাদের অনেকেই মনে করেন, এটা দেশের ক্রিকেট ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাজে উদাহরণ তৈরি করছে। এই দ্বন্দ্বে আসলে সাকিব-বিসিবি কেউ জয়ী হচ্ছে না! দিন শেষে হারছে দেশের ক্রিকেট।
এমন ভাবনার পেছনে একটা শক্ত যুক্তিও আছে, সাকিব কেবল দেশের ক্রিকেটের বড় তারকা নন তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আইকন। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই সাকিবকে আদর্শ মানে। সেই সাকিব যদি বারবার এমন বিতর্কে জড়ান, বিতর্কিত কাজ করেন; তাতে অনেকেই হতাশ হন। কারণ, তারকাদেরও তো ভক্ত ও সমাজের প্রতি খানিকটা হলেও দায় থাকে।
আবার দেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি ক্রিকেটারদের সাথেই দ্বন্দ্বে জড়ায়, আসল কাজের চেয়ে হুমকি-ধামকিতেই বেশি ব্যস্ত থাকে; তাতেও তো ক্রিকেটেরই ক্ষতি। তরুণরা এখান থেকে আসলে কী শিখবে বা শিখছে? সেই ভাবনাটাও জরুরি।