ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খামারের বিষ্ঠার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, প্রতিবাদ করায় হামলা

কামরুন নাহার | ১৮:২০, এপ্রিল ১৩ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চর আবদানী এলাকায় মুরগির খামারের বিষ্ঠার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। অভিযোগ উঠেছে, প্রাণিসম্পদের অনুমতি ও নীতিমালা উপেক্ষা করে গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খামারটি স্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে বলে জানায় গ্রামবাসী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে বেলতলা পূর্ব চরআবদানী গ্রামের মৃত রব হাওলাদারের পুত্র রনি হাওলাদার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্রয়লার মুরগির খামার স্থাপন করেন। বর্তমানে খামারে প্রায় পাঁচশত মুরগি রয়েছে। মুরগির বিষ্ঠার কারণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিষ্ঠার দুর্গন্ধে খামারের চারদিকে মানুষের বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। কিছুদিন পূর্বে খামারে চারশত মুরগির বাচ্চা নিয়ে আসা হয় এবং একসপ্তাহ পর মুরগির বাচ্চাগুলো মারা যায়। মৃত মুরগির বাচ্চাগুলো প্রতিবেশি নিয়াজদের পুকুরে এবং যেখানে সেখানে ফেলা হয়। এ বিষয় প্রতিবেশি রিয়াজ মৃত মুরগির বাচ্চাগুলো যেখানে সেখানে না ফেলে মাটিতে পুতে ফেলার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু রনি হাওলাদার ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ করে এবং প্রতিবেশি নিয়াজের ছোট ভাই রিয়াজ ও তার মাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। আহত মা ও ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে নিয়াজও হামলার শিকার হয়। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নিয়াজ বলেন, অনেকদিন যাবত রনি হাওলাদার এলাকায় মুরগির খামার পরিচালনা করে আসছে। তার খামারের বিষ্ঠার গন্ধ এবং মৃত্যু লেয়ার বয়লার মুরগী যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে। ঘটনার দিন রনি হাওলাদারের চারশত মুরগির বাচ্চা মারা গেলে আমাদের পুকুরে ফেলে। আমার ছোটভাই রিয়াজ তাকে নিষেধ করলে সে উত্তেজিত হয়ে আমার পরিবারের উপর হামলা চালায়। হামলায় আমার ছোট ভাই ও মা গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। এ ব্যাপারে আমি কাউনিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। ভুক্তভোগী নিয়াজ আরো বলেন, রনি একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। নেশার টাকার জন্য প্রায়ই ঘরের স্ত্রী ও মায়ের উপর হামলা চালায়। গত দুই-তিন মাসে আগেও স্ত্রীকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল। তাছাড়া গত দুই বছর আগে মাদক মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিনে এসে এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলছে। অন্যদিকে আমাদের ফাঁসাতে নিজের দোষ ঢাকতে হামলাকারী রনি নাটকীয়ভাবে থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এবং কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় সাংবাদিকদের ভূল তথ্য পরিবেশন করে আমাকে এবং আমার পরিবারকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার ব্যাপারে কাউনিয়া থানার ওসি আজিজুল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দুই পক্ষের কাছ থেকে দুটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি প্রাইমারি তদন্তে রয়েছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এদিকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহাতাব হোসেন সুরুজের মোবাইল ০১৭১২৫৫৪৪২৯ নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে চর আবদানী এলাকার আ’লীগের ওয়ার্ড সভাপতি ইব্রাহিম শেখ ঘটনার ব্যাপারে বলেন, রনি’র মুরগির খামারের বিষ্ঠার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। বিষয়টি একাধিকবার বললেও সে কারো কথা শুনে না। এরই জেরে ধরে গত দুই/তিনদিন আগে প্রতিবেশি রিয়াজের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রনি তাদের পরিবারের উপর হামলা চালায়। এতে উভয় পরিবারের লোকজন আহত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রনি হাওলাদার আমার আত্মীয় তবে প্রকৃতপক্ষে সে উগ্র-স্বভাবের। কিছুদিন আগেও আমার ওয়ার্ডের সেক্রেটারি সোহেল খান’র ভাইকে মাথায় কুপিয়ে জখম করে। এলাকায় তাকে ম্যাড (পাগল) রনি হিসেবে সকলেই চিনে কারন সে প্রায়ই তার মায়ের গায়ে হাত তোলে। এদিকে দুইপক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিলে তদন্ত অফিসার এসে আমাকে ডেকে ঘটনাটি মিমাংশার জন্য বলে। আমিও চেষ্টা করছি উভয়পক্ষকে নিয়ে ব্যাপারটি সমাধানের জন্য। অপরদিকে ওই এলাকার বাসিন্দা নুরুজ্জামান রতন বলেন, যেদিন রোদের তাপ বেশী থাকে সেদিন মুরগীর পায়খানার গন্ধে এলাকায় থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। মুরগীর পায়খানার গন্ধ নাকে মুখে প্রবেশ করে। ফলে খাওয়ার আর রুচি থাকে না। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, খামার স্থাপনের ক্ষেত্রে জাতীয় পোলট্রি উন্নয়ন নীতিমালা-২০০৮ মানা হয়নি। পাশাপাশি একটি মুরগির খামার স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হতে হয়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং জনগণের ক্ষতি হয় এমন স্থানে খামার স্থাপন করা যাবে না। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে রনি হাওলাদারের মুরগির খামার। তাই পরিবেশদূষণ এবং ঘনবসতি এলাকা থেকে পোল্ট্রি ফার্ম সরানোর বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনের নিকট দাবি জানায় এলাকাবাসী।