বরগুনায় দুলাল বাবুর ঘুষ বাণিজ্য ফাঁস

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৪৩, আগস্ট ১০ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরগুনার সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী দুলাল কৃষ্ণ মালাকারের (দুলাল বাবু) বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, ঘুষ বাণিজ্য, কাঙ্ক্ষিত উৎকোচ না পেলে শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক অফিসার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন সদর উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের ৪৭ জন শিক্ষক। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য এবং প্রতারণার অভিযোগে রয়েছে। তিনি একইস্থানে ২৮ বছর চাকুরি করে যাচ্ছেন দুলাল কৃষ্ণ অভিযোগে বলা হয়েছে, সহকারী শিক্ষকদের ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রাপ্য ১৩তম গ্রেডের বকেয়া বিল (২০২২ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত) দেয়ার জন্য সদর উপজেলার প্রায় ৬শ’ সহকারী শিক্ষকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে অন্তত ছয়লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষকদের দাবি, দুলাল কৃষ্ণের দায়িত্বে অবহেলা এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে এসব টাকার কাঙ্ক্ষিত উৎকোচ না পাওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকে চেক জমা করেননি। দুলাল কৃষ্ণ মালাকার দীর্ঘদিন একইস্থানে চাকুরি করার সুবাদে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে গেছেন। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়রানির পাশাপাশি যখন যে শিক্ষা কর্মকর্তা আসেন, তার নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হয়। অন্যথায় ওই কর্মকর্তা বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেন না। তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর বরগুনা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে দায়িত্বরত আছেন। এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ এবং দুর্নীতির অভিযোগের কারণে অন্য স্থানে বদলী করে দেয় শিক্ষা বিভাগ। তবে দুই বছর পর ফিরে এসে আবার আগের চাকুরিতে বহাল আছেদু লাল কৃষ্ণের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময় অবসর প্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মজিদের স্বাক্ষর জাল এবং একই স্বারক ব্যবহার করে নির্ধারিত মেয়াদের আগেই শিক্ষকদের স্থায়ীকরণের আদেশ দেন। বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারিখে একটি অফিস আদেশে ৪৩ জন শিক্ষককে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। সদর উপজেলার গাজী মাহমুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা খালেদা আক্তার রিনা বলেন, সম্ভবত ২০১৯ সালে আমার স্থায়ীকরণের কাগজপত্র অফিসে জমা দিয়েছি। তারপর কিভাবে কোন তারিখে অফিস আমার চাকুরি স্থায়ীকরণ করেছে তা সঠিক জানা নাই। এছাড়াও তিনি সদর উপজেলার ২২৮টি স্কুলের মধ্যে ৪৮টি স্কুলে কোভিড-১৯ এর সময় বিভিন্ন মালামাল কেনার জন্য বরাদ্দকৃত টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ব্যাংক হিসেবের অনুকূলে (জনতা ব্যাংক, বরগুনা শাখা) বরাদ্ধ দেয়া হলেও উক্ত টাকা কর্তৃপক্ষকে দিতে গরিমসি করছেন। এ ব্যাপারে সদর উপজেলার কড়ইতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান লিটন বলেন, কয়েকজন শিক্ষকের সহযোগিতায় অফিস সহকারী দুলাল বাবুর বেপরোয়া আচরণ, ঘুষ বাণিজ্য এবং শিক্ষক হয়রানি কোন ভাবেই থামছে না। তাকে উৎকোচ না দিয়ে ওই অফিসে কোন কাজ করা সম্ভব হয়না। যদি কোন শিক্ষক তার চাহিদামত উৎকোচ দিতে না পারে, তাহলেই তাকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে দুলাল কৃষ্ণ মালাকার বলেন, ভুলবশত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (২৬ জুলাই ২০২২) চেকগুলো জমা হয়নি। এগুলো আবারও পাওয়ার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আপনাকে উৎকোচ না দেয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে চেকগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠানো হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে দুলাল কৃষ্ণ বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়।   চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ৩ বছর সময় লাগে বলে জানান দুলাল কৃষ্ণ। তবে দু’বছরের আগে কিছু শিক্ষকের চাকরি কিভাবে স্থায়ীকরনের আদেশ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় আছি বরগুনা এসে আপনার সঙ্গে কথা বলবো। বরগুনা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: নাছির উদ্দিন বলেন, অফিসের উচ্চমান সহকারীর ভুলের কারণে নির্ধারিত সময়ে ৩৯টি চেক ব্যাংকে জমা হয়নি। দুলাল কৃষ্ণের ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে সঠিক তথ্য নেই। বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এম এম মিজানুর রহমান বলেন, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৯টি চেক জমা দেননি।   ভুলবশত নির্ধারিত সময়ে চেক জমা করেননি এমনটি আমাকে জানানো হয়েছে। তবে এটি দায়িত্বের অবহেলা, তাই এ ব্যাপারে জবাব চেয়ে চিঠি দেয়া হবে।