নুর আলম, কুয়াকাটা ॥ কুয়াকাটায় সমুদ্র সৈকত রক্ষার নামে (পাউবো) জিও ব্যাগ স্থাপনের বিশৃঙ্খল পরিবেশে পর্যটকদের ভোগান্তির কেন্দ্রস্থল। এতে সৈকত প্রবেশের প্রধান কেন্দ্রস্থলে পর্যটকদের মারাত্মক আহত হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারের মাত্রা দিনদিন আরো বাড়ছে। সৈকত এলাকার বিশেষ অংশে সংরক্ষিত বণাঞ্চলের ছিটেফোঁটাও না থাকায় রয়েছে বন্যাসহ বহুমুখী দুর্যোগের ঝুঁকিতে সাগর থাবায় হয়তো ভবিষ্যতে উপকূল অঞ্চলের মানুষের জন্য একসময় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই উপকূল দক্ষিণাঞ্চলের বিশেষ অংশ রক্ষা করতে সরকারের কাছে আন্তরিকতা ও জোর অনুরোধ জানান স্থানীয়রা।
আগত পর্যটকরা বলেন, কুয়াকাটাসহ উপকূল অঞ্চলে সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে সমুদ্র সৈকতসহ অবশিষ্ট বনাঞ্চলের বিশেষ অংশ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। কুয়াকাটা সৈকতে আগ্রহী ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা এমন শ্রীহীন পরিবেশে ভ্রমণ করার মানসিকতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। পদ্মা সেতু হওয়ায় কুয়াকাটামুখী পর্যটকদের যেমন ভ্রমণের উৎসাহ যোগাবে পর্যটকদের সেবায় তেমনি স্থানীয়দের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। যাতে দেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের একটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তাই সৈকতসহ পর্যটন কেন্দ্রের প্রতিটি দর্শনীয় স্থান সমূহকে সংরক্ষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য, সমুদ্রের কবল থেকে ভূমি রক্ষা এবং মানুষের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য একান্তভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে অচিরেই উপকূল দক্ষিণাঞ্চলের জন্য অর্থনৈতিক হুমকিসহ বসবাসের অযোগ্য এবং পর্যটন নগরীর বিশেষ আকর্ষণটুকুু হারাতে হবে।
তাই সংশ্লিষ্টদের দ্রুত সময়ের মধ্যে এমন কার্যকরী বিষয়টিকে আমলে নিতে জোর দাবি করছেন পর্যটক, দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা। কুয়াকাটা উপকূলের বাসিন্দা হানিফ সহ আরো অনেকে জানান, অতিদ্রুত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে সমুদ্র সৈকত রক্ষার উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করা হলে এতে যেমন পরিবেশের ভারসাম্যতা হারাবে এবং দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন শিল্পের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। উপকূলবাসীরা পড়বেন কর্মহীন হয়ে যা দেশের অর্থনীতিতে আশানুরূপ বিশেষ প্রভাব বিস্তার এবং রাষ্ট্রীয় আয়ের মাধ্যম ব্যাহত হবে বলে মন্তব্য করেন।
দেখা গেছে, কুয়াকাটা সৈকত এলাকায় জিরো পয়েন্টের দুই পাশে জিও ব্যাগের উঁচুনিচু স্তূপে রাতের আলো বিহীন সৈকতে আগত বিভিন্ন বয়সী পুরুষ এবং নারী পর্যটকরা গুরুতর দুর্ঘটনার শিকারের নজীর রয়েছে। এই সমুদ্র সৈকত লাগোয়া গুরুত্বপূর্ণ ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স এবং একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এই দুটি স্থাপনাকে ঘিরে সৈকতের জরাজীর্ণ দৃশ্য বিদ্যমান। তবে কুয়াকাটা সৈকতের যে সংকীর্ণ জায়গা সে তুলনায় পাবলিক টয়লেটটি নিয়ে পর্যটকদের বিশেষ মন্তব্য রয়েছে। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে সমুদ্র সৈকতের বেশ কয়েকটি অঞ্চল সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে অনেকেই দাবি করছেন সরকারের উন্নয়ন অব্যবস্থাপনার কারণে অধিক হারে বনাঞ্চলসহ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের বিলুপ্তির কারণ হয়েছে। যে কারণে সমুদ্র সৈকতের এমন অভিভাবক বিহীন কায়দা। স্থানীয়রা আরো দাবি করছেন যে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ যেসকল অঞ্চল পানির নিচে চলে গেছে তার অন্যতম কারণ বালু ক্ষয় হওয়া। কিন্তু সৈকতের বালু ক্ষয় রক্ষা করা এটির অসম্ভব ছিলোনা ওই সময়গুলোতে। তবে ধ্বংস¯তূপের শেষ সময়ে সংশ্লিষ্টরা তরিঘড়ি করে ইতোমধ্যে সরকারের কয়েক'শ কোটি টাকার বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে তিন ধাপে সৈকত রক্ষার উন্নয়ন প্রকল্পের কোনোই উপকার হয়নি বরং পর্যটন এলাকায় আগত পর্যটকরা বহু বিড়ম্বনাসহ মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত বলে মন্তব্য করেন রিয়াজুলসহ নামে স্থানীয় সুশীলরা।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সৈকত রক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে যতদ্রুত সম্ভব কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত রক্ষাসহ উপকূলের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে সরকারের কাছে বিশেষভাবে আবেদন করছি। যাতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের সোপানে এবং উপকূলের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো'র) কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, “সমুদ্র সৈকত রক্ষা প্রকল্প” বাস্তবায়নে জন্য সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।