আগৈলঝাড়ায় ১২ বছর শিকলে বন্দী এক সন্তানের জননী রুমা
দেশ জনপদ ডেস্ক|২১:১৯, জুলাই ২১ ২০২২ মিনিট
আতাউর রহমান চঞ্চল, গৌরনদী ॥ দীর্ঘ ১২ বছর ধরে শিকলে বন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাবনে দিন কাটাচ্ছে এক সন্তানের জননী রুমা বেগম (৩০)। মানসিক ভারসম্যহীন অসহায় রোগী রুমা বেগম’কে বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরের খুঁটির সাথে লোহার শিকলে পাঁয়ে তালা বন্দী রাখা হয়েছে। বন্দী অবস্থায় কেটে গেছে একযুগ।
বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের চেংঙ্গটিয়া গ্রামের অসহায় দিনমুজুর মোঃ মজিবর হাওলাদার এর কন্যা রুমা বেগম’। গত সোমবার (২০ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে অসহায় রুমা বেগমের এমন করুন দৃশ্য দেখা যায়। পাঁচ সদস্যের সংসারে অভাব অনটনে ঠিকভাবে তিন বেলা খেতে পায়না। অর্থের অভাবে রুমা বেগমের ভাল কোন সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারছেনা পরিবারটি। শিকল বন্দী মানসিক ভারসম্যহীন রুমা সংসারের বোঝা হয়ে কখনও খেয়ে, কখনও না খেয়ে দিন কাটচ্ছে ঘরের ভাঙ্গা বারান্দায়।
মানসিক ভারসম্যহীন রুমা বেগম মজিবর হাওলাদারের প্রথম সংসারের স্ত্রী হেনারা বেগমের বড় কন্যা। ছোট বেলায় মায়ের মৃত্যু পর বেড়ে উঠে সৎ মায়ের সংসারে। বড় হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষার আলো দেখতে পায়নি রুমা। অভাবের তারনায় ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দেন পিতা মজিবর হাওলাদার। পাশবর্তী গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামের সেকেন্দার হাওলাদারের পুত্র সেলিম হাওলাদারের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী-সংসারে সুখশান্তি ও আনন্দের জীবনযাবনে দিন কাটছিলো রুমা বেগমের। বিবাহিত জীবনে প্রথম সন্তান জন্ম নেয়ার কিছুদিন পর অসুস্থ হয়ে মারা যায় প্রথম সন্তান।
দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেয়ার বেশ কিছু দিন পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরন শুরু করে। স্ত্রীর অসুস্থতা দেখে স্বামী সুচিকিৎসার জন্য ডাক্তার, কবিরাজ এমনকি ফকিরের শণাপন্ন হন। কয়েক বছর চিকিৎসা নেওয়ার পরও যখন রুমার সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসার কোন লক্ষ না দেখে স্বামী সেলিম হাওলাদার স্ত্রী রুমাকে চেংঙ্গটিয়া পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। দিন দিন রুমার পাগলামির মাত্রা বেরে যাওয়ায় পিতা মজিবর হাওলাদার পূরণায় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে ব্যর্থ হন। পরে মানসিক ভারসম্যহীন অসহায় রুমা বেগম’কে ঘরের খুঁটির সাথে পাঁয়ে লোহার শিকলে তালা বন্দী করে রাখে।
সেই থেকে রুমা আজ অবধি বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরে থাকা-খাওয়া, বন্দী মানবেতর জীবনযাবন করছে। রুমার পিতা দিনমুজুর অসহায় মজিবর হাওলাদার কান্না ভরা কন্ঠে বলেন, মা হারা আমার কন্যা রুমার পাঁয়ে শিকল বন্দী জীবনযাবন ও অর্থের অভাবে বর্তমানে চিকিৎসা করাতে পারছিনা। পিতা হয়ে এমন করুন দৃশ্য আর সহ্য করতে পারছিনা। আক্ষেপ করে আরো বলেন, প্রতিবন্ধীভাতা হলেও আজ পর্যন্ত আমার পরিবারে রুমার নামে মেলেনি ভিজিডি, ভিজিএফ বা কোন সরকারি অনুদান।
তিনি সরকারসহ সমাজের সকল বিত্তবানদের কাছে মানসিক ভারসম্যহীন কন্যা রুমার সু-চিকিৎসায় এগিয়ে আসার আহবান জানান।