মেয়রকে কোপানোর নির্দেশ দিলেন এমপি, কলরেকর্ড ফাঁস

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৩:৪৫, জুলাই ১৯ ২০২২ মিনিট

যে কোপ খাইছে সে তো খারাপ, নেশাখোর, অ্যাডিকটেড, তাই না! এ নিয়া যেন মাতবরি না করে, বারাবারি না করে। আমি পোলাপানরে রেডি হইতে কইসি। কইসি যে তোরা রেডি হইয়া যা, যা থাকে কপালে। যুদ্ধ হইয়া যাক একটা।’ ফোনে এক প্রান্ত থেকে এমন কথা শুনে অন্য প্রান্ত থেকে বলা হলো, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, স্যার।’ ফাঁস হওয়া ১ মিনিট ৯ সেকেন্ডের এমন একটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অভিযোগ, এ ফোনালাপ বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ ও মেহেন্দীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামানের। ৪ জুলাই মেহেন্দীগঞ্জের পৌর শহরের চরহোগলায় পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাতুল চৌধুরীকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ওই ঘটনার পর পুলিশ কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জানকে ফোন করেন এমপি পঙ্কজ। জানতে চাইলে তৌহিদুজ্জামান নিশ্চিত করেন যে এমপি তাঁকে ফোন করেছিলেন। তবে এমপি যা বলেছিলেন তা তাঁদের রাজনৈতিক উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছুই বলার নেই।’ আর এমপি পঙ্কজ বলছেন, পরিদর্শকের (তদন্ত) সঙ্গে তাঁর এমন কোনো কথা হয়নি। এটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র। অডিও রেকর্ডের তথ্যানুযায়ী, এমপি পঙ্কজের ফোন পেয়ে পরিদর্শক (তদন্ত) তৌহিদুজ্জামানকে বলতে শোনা যায়, ‘স্যার আদাপ, স্যার।’ এমপি পঙ্কজ অপর প্রান্ত থেকে বলেন, ‘আদাপ, আপনি ভালো আছেন? আপনি কোথায়?’ জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যার আমি পৌরসভার সামনে আছি।’ এমপি তখন বলেন, ‘ওইখানে মারামারি যা হয়েছে তো হইছে, ওই শালায় তো খারাপ। ওরা মারামারি করলে আমাদের লোকজনকে বলে দিয়েছি, রামদা লইয়া ওপেন শুড করতে। ফাইজলামি করলে কিন্তু সামনাসামনি কোপ খাইবে। আপনি কইয়া দেন যে সিদ্ধান্ত হইছে মেয়র (মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কামাল উদ্দিন খান) সামনে পড়লে মেয়রকেও কোপাইব। যে সামনে পড়বে হ্যারেই কোপাইব, কেমন!’ জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আচ্ছা স্যার, দেখছি। আমরা আছি বাইরে।’ এমপি জানতে চান, ‘ওসি কই, ওসি কই?’ পুলিশ কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান তখন বলেন, ‘ওসি স্যারে বরিশালে আছেন, স্যার।’ এমপি পঙ্কজ বলেন, ‘ঠিক আছে, যে কোপ খাইছে সে তো খারাপ, নেশাখোর, অ্যাডিকটেড, তাই না! এ নিয়া যেন মাতবরি না করে, বারাবারি না করে। আমি পোলাপানরে রেডি হইতে কইসি। যে তোরা রেডি হ, যা থাকে কপালে, যুদ্ধ হইয়া যাক একটা।’ জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, স্যার।’ এ ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান গতকাল সোমবার বলেন, ‘আমি শুনছি একটা কল রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি রাতুল নামে এক ছেলেকে কোপানোর ঘটনায় দুই গ্রুপ নেমে পড়েছিল। তখন রাতে এমপি ফোন দিয়েছিলেন। এমপি অনেক কিছুই বলছেন, কিন্তু কী তা, রেকর্ড শুনে বলতে পারবেন। তিনি যা বলেছেন সেসব তাঁদের রাজনৈতিক বিষয়, এ বিষয়ে আমার কিছুই বলার নেই।’ অডিও রেকর্ডটি এমপি পঙ্কজের দাবি করে মেহেন্দীগঞ্জের মেয়র কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি শুনেছি যে সে আমাকে কোপানের নির্দেশ দিয়েছে। এটি তারই বক্তব্য। বিষয়টি দলের শীর্ষপর্যায়ে অবহিত করেছি। কেন এমপি আমাকে কোপাতে চায়, তা জানা নেই।’ তবে এমপি পঙ্কজ নাথ বলেন, ‘মেয়র কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসরাই তো গত দেড় বছরে মেহেন্দীগঞ্জে কোপাকুপি করিয়েছে। এটা কামাল খানদের নাটক। কয়েক দিন আগে যে কোপাকুপি হয়েছে, এসবের নাটের গুরু তালুকদার ইউনুস, কামাল খানরা।’ এ বিষয়ে তালুকদার ইউনুস সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত যে অডিও রেকর্ডের কণ্ঠস্বর এমপি পঙ্কজের। যে নেতার দলের কর্মীদের ওপর দরদ নাই, তাঁরাই এ ধরনের কোপানোর নির্দেশ দিতে পারেন। এমপি পঙ্কজ অভিযোগ অস্বীকার করে আবারও কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছেন।’ সূত্রঃ আজকের পত্রিকা