পদ্মা সেতু চালুর আগ মুহূর্তে ১১ কিমি মহাসড়ক নিয়ে বিসিসির তোড়জোড়

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৩৮, জুন ২১ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ পদ্মা সেতুর চালুর পর বরিশাল নগরী অংশের মহাসড়কে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। ১০ বছর ধরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চললেও এখন সেতু উদ্বোধনের আগে নগরী অংশের ১১ কিলোমিটার মহাসড়ক নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে তারা। এর অংশ হিসেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জেলা ও মেট্রো পুলিশের ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে সমন্বয় সভা করেছেন সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। ওই সভায় গড়িয়ারপাড় থেকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের মাঝখানের ডিভাইডার ভেঙে দিয়ে সড়কের দুই পাশ প্রশাস্তকরণ, গুরুত্বপূর্ণ মোড় বর্ধিতকরণ এবং ৪টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের আলোচনা গুরুত্ব পায়। বিভিন্ন ধাপে সড়ক বিভাগ এই কাজ বাস্তবায়ন করলেও অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে সিটি মেয়রসহ স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকদের চাহিদাপত্র সহ জোড়ালো তদবির কামনা করেন সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। এদিকে, সুবিধাভোগীদের সাথে আলোচনা না করে মহাসড়ক সংস্কারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সেটা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি। ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরিশাল নগরীর প্রবেশদ্বার গড়িয়ারপাড় হয়ে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত ১১.২০ কিলোমিটার সিটি করপোরেশন এলাকার অন্তর্ভুক্ত। একই সড়কে বিপজ্জনকভাবে চলাচল করে পথচারী, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ঠেলাগাড়ি, প্যাডেল রিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও ভ্যান, অটোরিক্সা, নসিমন, করিমন, ভটভটি, থ্রি-হুইলার, হালকাযান, বাস, ট্রাক, লরি-ট্রেলর সব কিছু। দিনরাত সমান ব্যস্ত থাকে মহাসড়কের বরিশাল নগরীর অংশের এই ১১ কিলোমিটার। মহাসড়কের এপাড় থেকে ওপাড়ে স্কুল-কলেজ-বাজার-হাসপাতাল-অফিসসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াতে চরম ঝুঁকিতে আছেন লাখ লাখ বাসিন্দা। এ অবস্থায় আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। সেই চাপ সামাল দিতে সেতু উদ্বোধনের মাত্র ৪ দিন আগে উদ্যোগ নিয়েছেন বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। গত সোমবার রাতে নগর কর্তৃপক্ষের এনেক্স ভবনে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় সভা করেন মেয়র। আসন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত চান তিনি। সভায় মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শেখ মো. সেলিম নগরীর গড়িয়ারপাড় থেকে দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, মোড় বর্ধিতকরণ এবং নথুল্লাবাদ, হাতেমআলী কলেজ চৌমাথা, রূপাতলী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ৪টি ফুটওভার ব্রিজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। আগামীতে আরও কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ প্রয়োজন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে স্বীকার করেন তিনি। মহাসড়কের দুই পাশের ডিভাইডার ভেঙে সড়কের জায়গা বাড়ানোর বিষয়ে মতামত চান মেয়র। নগরীর অংশের মহাসড়ক আশু সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে এই কাজের অর্থ বরাদ্দে জনপ্রতিনিধিদের চাহিদাপত্র এবং তদবির প্রয়োজন বলে মতামত দেন বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী একেএম আজাদ রহমান। সভায় সিটি মেয়র বলেন, এতদিন নগরবাসীর স্বার্থে এই সড়ক সম্প্রসারণ প্রয়োজন হতো। এখন সরকারের প্রয়োজনেই এই সড়ক সম্প্রসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের স্বার্থেই এই কাজের দ্রুত অর্থ বরাদ্দ হবে আশা মেয়রের। সভার বিষয়ে বরিশাল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন বলেন, সিটি করপোরেশনের সমন্বয় সভায় তারা মতামত দিয়েছেন। এই কাজের প্রথম ধাপ হিসেবে সড়কের পাশের গাছ কাটা এবং বিদ্যুতের খুুঁটিগুলো সরাতে হবে। মেয়র গাছ কাটা এবং বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থ বরাদ্দ হলে ধাপে ধাপে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে। বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সাহ সাজেদা বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রাক্কালেই এই উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল। শুধু ৪টি ফুট ওভার ব্রিজ নয়, আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুটওভার ব্রিজ দরকার হবে। সুবিধাভোগীদের মতামত এবং সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া কোনো কাজ করলে সেগুলো অর্থহীন হবে এবং এগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা জনরোষের মুখে পড়বে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ বলেন, মহাসড়ক সম্প্রসারণে শীঘ্রই সুশীল সমাজের মতামত নেবেন সিটি মেয়র। এই বিষয়ে নানা মানুষের মতামত সিটি মেয়রকে অবহিত করা হবে।