ঘোষণার পরও আসেনি সহায়তা, মামলার গতি মন্থর

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:০৭, জুন ১৮ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইলে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার ২১ দিন পার হলেও নিহতদের পরিবার এক টাকাও সহায়তা পাননি। যদিও নিহতদের দাফন বাবদ ২০ হাজার টাকা করে তাৎক্ষণিক সহায়তা ঘোষণা দিয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার। সেই টাকা ব্যয় করেই নিহতদের দাফন হওয়ার কথা ছিল। তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ধারকর্জ করে মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিয়েছেন কেউ কেউ। উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত নিহতদের মরদেহ দাফনের কোনো টাকা বরাদ্দ পায়নি তারা। যদিও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে পুনরায় আশ্বস্ত করে জানানো হয়েছে, শিগগিরই সহায়তা প্রদানের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এমনকি বাসের চালককেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ক্ষতিগ্রস্ত বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার সুন্দরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা নাসির হাওলাদার বলেন, দুর্ঘটনায় আমার ভাই রমজান মারা গেছে। সে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানার নিরাপত্তাকর্মী পদে চাকরি করত। বোনের জানাজা দিতে এসে সে নিজেও প্রাণ হারায়। ওর পরিবার এখন অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করছে। আমাদের কেউ একটি টাকাও সহায়তা করেনি। এমনকি উপজেলা প্রশাসন থেকেও কেউ দেখতে আসেনি। একজন নিরাপত্তাকর্মীর তো অঢেল টাকা থাকে না। তার দাফনের টাকাটাও আমাদের ধার করে পরিশোধ করতে হয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের মীরের হাওলা গ্রামের আল আমিন বলেন, আমার পরিবারের দুজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদের বাসিন্দা হালিম মিয়া আমার ভাগনে। এ সময় হালিমের ফুফাতো ভাই রেজা চোকদারও নিহত হয়। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই অসচ্ছল। বরিশালে যখন মরদেহ আনতে যাই, তখন বলা হয়েছিল অর্থসহায়তা করবে। কিন্তু সেই টাকাও আমরা এত দিনেও পাইনি। এখন রাষ্ট্রের উচিত আমাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া। ঝালকাঠির বাসিন্দা আঁখি বেগম বলেন, আমার ছেলে আরাফাত (৯) মারা গেছে। আমার ও ছোট মেয়ে মরিয়মের পা ভেঙেছে। কিন্তু সরকার একটি টাকাও সাহায্য করেনি। ধারকর্জ করে আমাদের চিকিৎসা চলছে এখন। বরিশালে টাকা দেওয়ার কথা বলা হলেও কেউ খোঁজই নেয়নি। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে দুনিয়ায় নেই। পুরো পরিবার পঙ্গু হয়ে গেছি। সেই বাসচালক আজও গ্রেপ্তার হয়নি। আর হবে বলেও মনে হয় না। সবাই শুধু নিয়ম রক্ষা করে চলে, আমাদের পাশে কেউই থাকে না। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থসহায়তার বিষয়ে তারা এখনো অবহিত নন। ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেকুন নাহার বলেন, আমার উপজেলার একজন শিশু নিহত হয়েছে জেনেছি। কিন্তু তাদের সহায়তার জন্য উপজেলা প্রশাসনে কোনো বরাদ্দ আসেনি। মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উর্মি ভৌমিক বলেন, ওই দুর্ঘটনায় উপজেলার ভেচকী এলাকার দুজন নিহত হয়েছেন। খবর পেয়ে আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। যখন গিয়েছি, তখন তাদের দাফন হয়ে গেছে। নিহতদের পরিবারের অবস্থা সচ্ছল। সহায়তার জন্য স্বজনদের বললে তারা বলেছিলেন, দরকার নেই। তবে নিহতদের দাফনের জন্য কোনো টাকা বরাদ্দ আসেনি। এলে ক্ষতিগ্রস্তদের পৌঁছে দেওয়া হবে।   বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুহৃদ সালেহীন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অনুকূলে এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাইনি। পেলে পৌঁছে দেব। বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওছার হোসেন বলেন, দাফনে সহায়তার জন্য কোনো বরাদ্দ এখনো আমরা পাইনি। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ঘোষণার পরপরই বিভাগীয় কমিশনার স্যার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমি বরিশাল জেলায় একজনকে পেয়েছিলাম, তাদের সহায়তা করেছি। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত যারা রয়েছেন, তাদের অনুরোধ করব যেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনে যোগাযোগ করেন। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই নিহতদের দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। হয়তো সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনে টাকা ছিল না বিধায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনো হাতে পায়নি। তবে আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। যেহেতু ঘোষণা দিয়েছি, অবশ্যই এই সহায়তা তারা পাবে। এদিকে এত দিন পরও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। এতে স্বজন হারানোর বিচার পাবেন কি না, সেটি নিয়ে পরিবারগুলোর হতাশা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ বেলাল হোসেন বলেন, বাসের চালক ছিলেন বাকেরগঞ্জ উপজেলার বোয়ালিয়া বাজার এলাকার মানিক খানের ছেলে আরিফ খান ওরফে মিন্টু। এটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছি। তাকে আটক করতে পারিনি। সে কোথায় আছে, তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তবে চালক বেঁচে আছেন, এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রসঙ্গত, বিগত ২৯ মে (রোববার) ঢাকা থেকে ভান্ডারিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসা যমুনা লাইন পরিবহনের চালকের ভুলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল নামক স্থানে মর্মানিত সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে ঘটনাস্থলে ৯ জন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন ইমরান, রিপন খান, আরাফাত হোসেন হাওলাদার, নজরুল ইসলাম আকন, আনোয়ারা বেগম, হালিম মিয়া, সেন্টু মোল্লা, মাধব শীল, রেজা চোকদার ও রমজান হাওলাদার (৩৮)। এ ঘটনায় আহতরা এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরপরই তাদের দেখতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান। তখন তিনি প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অর্থসহায়তার ঘোষণা দিয়েছিলেন।