নিজস্ব প্রতিবেদক , বরিশাল ॥ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার ভুল তদন্তে কারাভোগ করায় নিলয় পারভেজ রুবেল নামের এক যুবক চাকরি হারিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। উপায়অন্তুর না পেয়ে অসহায় রুবেল আইনজীবীর মাধ্যমে তদন্ত কর্মকর্তাকে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছেন। ঘটনাটি নগরীর চাঁদমারী এলাকার।
আজ শনিবার সকালে নিলয় পারভেজ রুবেল বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরধরে আমাকেসহ বাবা ও মায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। যা বরিশালের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে চলমান রয়েছে।
অভিযোগ করে রুবেল বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার এসআই শহিদুল ইসলাম চলতি বছরের ১১ মার্চ অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। এতে প্রথমে আমার নাম ঠিক করে উল্লেখ করা হলেও শেষেরদিকে নাম নিলয় পারভেজ রুবেলের পরিবর্তে মোঃ পারভেজ হাওলাদার, বাবার নাম মোঃ জাহাঙ্গীর হাওলাদার এবং ঠিকানা কাউনিয়া থানার পলাশপুর ৮নং গুচ্ছগ্রাম উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি আমার (রুবেল) বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাসহ সাতটি মামলা রয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
রুবেল বলেন, চার্জশিটে জনৈক পারভেজ হাওলাদারের মায়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি তার (পারভেজ) মায়ের নাম পারুল আক্তার। আর আমার মায়ের নাম নাহার আলম। আমার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার। আমরা নগরীর চাঁদমারী এলাকার বাসিন্দা।
তিনি (রুবেল) বলেন, আমার নাম ও আমার বাবার নামের সাথে পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা সাতটি মামলার আসামির নাম ও বাবার নাম কিছুটা মিল থাকায় এসআই শহিদুল ইসলাম আমাদের মামলার বাদীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলার চার্জশিটে বিভিন্ন থানায় দায়ের করা সাতটি মামলা অন্তর্ভূক্ত করে আমাকে সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন।
রুবেল জানান, অভিযোগপত্র জমা দেয়ার পর তিনি গত ৯ মে আদালতে হাজির হলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাসুম বিল্লাহ তাকে (রুবেল) জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে তিনদিন কারাভোগের পর আইনজীবীর মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন কার্ড ও নাগরিক সনদপত্র দাখিলের পর তিনি (রুবেল) জামিনে বের হন।
রুবেল বলেন, আমি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পানি শাখায় পাম্প অপারেটর পদে জিলা স্কুল পাম্পে কর্মরত ছিলাম। পুলিশের মনগড়া ও ভুল চার্জশিটের কারণে কারাগারে যাওয়ার পর আমাকে গত ১০ মে কর্পোরেশন থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
রুবেলের আইনজীবী আজাদ রহমান বলেন, সিডিএমএস এ সার্চ দিয়ে নিলয় পারভেজ রুবেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেখা যায়নি। অথচ জনৈক পারভেজ হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলার সার্চ দিলে আটটি মামলা দেখা যায়। অবৈধ উপায়ে লাভবান হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিলয় পারভেজ রুবেলকে আদালতে চিহ্নিত আসামি হিসেবে বোঝাবার চেষ্টা করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমনটা করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। যে কারণে রুবেল চাকরিচ্যুত হয়ে এখন চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
আইনজীবী আজাদ রহমান আরও জানান, আইনী নোটিশে এসআই শহিদুল ইসলামকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। এরমধ্যে জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় গ্রহন করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানার এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, সিডিএমএসে সার্চ দিয়ে যেটা পাওয়া গেছে, সেটাই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনী নোটিশ এখনও হাতে পাননি দাবি করে তিনি আরও বলেন, নোটিশ পাওয়ার পর বিস্তারিত বলতে পারবো।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, আমাদের কোনো পুলিশ সদস্য এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার প্রলয় চিসিম বলেন, এ বিষয়ে এখনও কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে আমাদের পুলিশ সদস্যরা এ ধরনের অপরাধ করে থাকলে এবং তা প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।