পটুয়াখালীতে সাপের খামার বন্ধের খবরে দিশেহারা প্রবাসী খামারী

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:৪৮, জুন ১০ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক , পটুয়াখালী ॥ পটুয়াখালীর সদর উপজেলার নন্দীপাড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক বিশ্বাসের সাপে খামারটি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে বন বিভাগ। সরকারের যথাযথ কৃর্তপক্ষের অনোমোদন না থাকায় এ সিদ্ধান্ত। খামারটিতে বর্তমানে ৩’শ প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের বিষধর সাপ রয়েছে। এক সময়ের প্রবাসী রাজ্জাক গত ২২ বছর ধরে এ কামারটি পরিচালনা করে আসছিলেন। হটাৎ করেই দীর্ঘ ২২ বছরের সাপের খামার বন্ধ করাসহ খামারের বিষধর সাপগুলো উদ্ধার করে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। প্রবাসী অর্থে গড়ে তোলা স্বপ্নের খামারটি বন্ধের ঘোষণা শোনার পর থেকে দিশেহারা খামারী রাজ্জাক বিশ্বাস। প্রবাস জীবনের ইতি টেনে ২০০০ সালে সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামে প্রবাসী আবদুর রাজ্জাক বিশ্বাস তাঁর গ্রামের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন সাপের খামার। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিষধর সাপ ধরে আনা কালো গোখড়ো, খইয়া গোখড়ো, কিং কোবরা পঙ্খীরাজ, কেউটে, দাঁড়াশ, বাসুয়া, কালকুলিন, সাদা গোমা, পদ্ম গোমা, বিষঝুড়ি ও গোঁড়াস সহ প্রভৃতি প্রজাতির প্রায় ৩ শতাধিক সাপ রাজ্জাকের খামারে রয়েছে। প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালে ‘বাংলাদেশ স্নেক ভেনম’ নামের সাপের খামারটি নিবন্ধন ও ২০১৮ সালে পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এখনো সরকারের কোন দপ্তর থেকে কোনো অনুমোদন পাননি রাজ্জাক বিশ্বাস। এরই মধ্যে চলতি বছরের ২৭ মে রাজ্জাক বিশ্বাসের খামারে পালিত সাপের কামড়ে জব্বার তালুকদার (৪০) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এরপরই নরেচরে বসে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। গত ৩০ মে ঢাকা থেকে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের এক প্রতিনিধিদল ও পটুয়াখালী বন বিভাগের প্রতিনিধিরা খামারটি পরিদর্শন করে। নিহত শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করেন। গত ৩১ জুনের মদ্যে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট থেকে রাজ্জাক বিশ্বাসকে খামারটি বন্ধ করাসহ খামারের সাপগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হলেও তার কোন কাগজ পায়নি তিনি। আর এলাকা বাসীর দাবি সাপের খামার স্থাপনে কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। জেলার কোথাও কোন বিষধর সাপ দেখলে স্থানীয়রা রাজ্জাক বিশ্বাসকে ফোন দিলে তিনি সাপগুলো ধরে তার খামারে নিয়ে যায়। এতে স্থানীয়দের উপকার হয় বলে জানান তারা। আর রাজ্জাক বিশ্বাস দাবি করেন, বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কোন চিঠি পাননি তিনি। সরকারী নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে খামারের অনুমোদন পেতে আবেদন করলেও এখনো অনুমোদন পাইনি। অনুমোদন পেলে খামারটির বিষধর সাপ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮ কোটি টাকা মূল্যের বিষ উৎপাদন সম্ভব। যা দেশীয় ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এদিকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, 'ওই খামারের বিষাক্ত সাপগুলো উদ্ধারে একটি বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানোর জন্য ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ টিম এলেই খামার থেকে সাপগুলো উদ্ধার করে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে। রাজ্জাক বিশ্বাস ১৯৯৯ সালে এইচএসসি পাসের পর সৌদি আরবে প্রবাসী ছিলেন। সে সময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এক সাপের খামারের সন্ধান পান। ২০০০ সালে দেশে এসে সাপের এই খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন রাজ্জাক।