দখল-দূষণে প্রাণ হারাচ্ছে কীর্তনখোলা নদী

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:১৭, জুন ০৯ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক , বরিশাল ॥ কীর্তনখোলা নদীকে ঘিরে গোড়াপত্তন হয়েছিল বরিশাল শহরের। আজ দখল-দূষণে প্রতিনিয়ত জৌলুস হারাচ্ছে সেই কীর্তনখোলা। নদীর দুই তীরে ডকইয়ার্ড, গোডাউন, কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনার কারণে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে নদী। এতে নদী তার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি হারাতে বসেছে। অপরদিকে নগরবাসীর উন্মুক্ত জায়গায় ফেলা বর্জ্য ড্রেন, নালা হয়ে খালের পানিতে গিয়ে মিশছে। সেই খালের পানি যাচ্ছে কীর্তনখোলায়। এতে নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে। অতিসম্প্রতি বরিশাল নগরীতে অনুষ্ঠিত একটি গণশুনানীর বরাত দিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী এ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি জার্নালে কীর্তনখোলা নদীর দূষণ নিয়ে গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধে নদীর পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া খালগুলোর অবস্থাও খারাপ। ময়লা-আবর্জনা ফেলা ও সংস্কারের অভাবে ক্রমশ সরু হয়ে গেছে এসব খাল। তিনি আরও বলেন, এসব থেকে সহজেই ধারণা করা যায়, ধান-নদী-খালের দেশ বরিশালের সামনে বড় বিপদ আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনে যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা যদি সত্যি হয় তাহলে বরিশালের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এ বিপর্যয় মোকাবেলা করতে হলে খাল-নদী দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি বরিশালকে বাঁচাতে দখলদারদের প্রতিরোধ এবং দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। সূত্রমতে, কীর্তনখোলা নদীবিধৌত বরিশাল নগরীতে ইতোমধ্যে ২২টি খাল দখল-দূষণে মরে গেছে। যে কয়েকটি টিকে আছে, তাও স্থানীয়রা নর্দমা হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে ক্রমেই নদী মরে গিয়ে পরিবেশ হুমকির মুখে পরেছে। শুধু নগরীর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খালগুলো নয়, এবার পরিবেশ বিপর্যয়ের হুমকিতে পরেছে খোঁদ কীর্তনখোলা নদী। নগরীর পাশ ঘেঁষে বহমান এ নদী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে আসছে। কিন্তু নদীর তলদেশে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের আস্তরণ পরার কারণে নদীর ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদী ড্রেজিংয়ের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, নদীর তলদেশের বেশ কয়েকটিস্থানে পলিব্যাগের আস্তরণ পরেছে। মূলত নগরীর ভেতরকার খাল থেকে এসব পলিথিন ও ময়লা-আবর্জনা কীর্তনখোলায় নির্গত হয়। এছাড়া বড় একটি অংশ বিলাস বহুল নৌযান কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীদের অসচেতনার কারণে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বুড়িগঙ্গার মতো করুণ পরিণতি হতে পারে শান্ত-স্নিগ্ধ রূপবতী কীর্তনখোলার। বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নদীতে পলিথিন ফেলা বন্ধ করতে আমরা লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়েছি। এছাড়া নৌ-বন্দরের জমিতে ডাস্টবিন তৈরি করে দিয়েছি। এরপরেও যদি কেউ আইন অমান্য করে নদীতে ময়লা ফেলে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মদ বলেন, নগরীর মধ্য থেকে প্রবাহিত ৪৬টি খাল পুনরুদ্ধার এবং খননের জন্য ২৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলেই খালগুলো উদ্ধার করা হবে। তখন নগরীর পরিবেশ ফিরে আসবে। দূষণের হাত থেকে কীর্তনখোলা নদী অনেকটাই রক্ষা পাবে।