বাড়ির পাশে মর্গ নিয়ে গ্রামজুড়ে ভয়, অস্বস্তি

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:০৭, জুন ০৮ ২০২২ মিনিট

  ঝালকাঠির সিভিল সার্জন শিহাব উদ্দিন বলেন, এ মুহূর্তে মর্গটি অপসারণ করা সম্ভব নয়।’ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ‘লাশকাটা ঘর’ বা মর্গটি নির্মাণ করা হয় আশির দশকে। সদর হাসপাতাল থেকে এক কিলোমিটার দূরে চাঁদকাঠি বিকনা সড়কের পাশে এর অবস্থান। নিজস্ব প্রতিবেদক॥ নির্মাণের সময় জায়গাটি বেশ নির্জন থাকলেও বর্তমানে বিকনা সড়কের দুই পাশ আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় ওই এলাকার বাসিন্দারা মর্গটি নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে রয়েছেন। এটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি তুলেছেন তারা। একই দাবিতে বছর দুয়েক আগে জেলা প্রশাসকের কাছে ‘নাগরিক ফোরাম’ নামের একটি সংগঠন স্মারকলিপিও দিয়েছিল। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এখন পর্যন্ত ময়নাতদন্তের জন্য ওই মর্গটি ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নির্ধারিত কক্ষ আছে। কিন্তু সেই কক্ষে এখন বসবাস করছেন হাসপাতালেরই এক অ্যাম্বুলেন্স চালক। আবাসিক এলাকার মর্গটি নিয়ে আশপাশের বাসিন্দারা জানান, ময়নাতদন্তের জন্য আনা লাশ দেখা এবং দুর্গন্ধে বেশ বিব্রত স্থানীয়রা। এটি সরিয়ে না নিয়ে বর্তমানে আরও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। বানানো হচ্ছে হিমঘর। সরেজমিন দেখা যায়, লাশকাটা ঘরের পেছনের দিকে রয়েছে প্রবহমান একটি খাল। সেখানে লাশের পরিত্যক্ত অংশ এবং রক্ত ফেলা হয়। পুরোনো ভবনের সামনের অংশে খালি জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন ভবন। সেখানে লাশ রাখা, কাটা, ওয়াশ এবং ফ্রিজিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। স্থানীয় টিপু সুলতান বলেন, ‘তৎকালীন বিকনা গ্রামের বাসিন্দাদের বাধার মুখেই এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সময়ের পরিবর্তনে এই মর্গের আশপাশ এখন ঘনবসতিপূর্ণ। নারী ও শিশুরা সন্ধ্যার পর ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে চায় না। এটি হাসপাতাল কম্পাউন্ডে সরিয়ে নেয়া ছিল আমাদের প্রাণের দাবি।’ মর্গের কাছাকাছি একটি বাড়ির বাসিন্দা সদর উপজেলার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নাসরীন আক্তার বলেন, ‘সন্ধ্যায় কোনো লাশ আনা হলে তা সারা রাত রাস্তার পাশে রেখে দেয়া হয়। আর তা যদি হয় পানিতে পড়া, গলিত বা কবর থেকে তোলা- তাহলে দুর্গন্ধে ঘরে থাকা যায় না।’ বর্তমানে এটি অন্যত্র না সরিয়ে আরও আধুনিকায়ন করায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনিও। মর্গটির পাশেই বহুতল ভবন করেছেন স্থানীয় ঠিকাদার মোহাম্মদ সানাউল হক সানু গাজী। তিনি বলেন, ‘এখানে লাশ আনার পর হাসপাতাল থেকে ২-৩ ঘণ্টায়ও ডাক্তার আসে না। ভেতরটা অরক্ষিত, লাশের বর্জ্য ফেলা হয় খালের পাড়ে। কোনো কোনো সময় লাশ সারা রাত গেটের বাইরে সড়কের পাশে রেখে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে আমরা বেশ বিব্রত।’ স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সুকোমল ওঝা দোলন বলেন, ‘বাসা কোথায় কেউ জানতে চাইলে, লাশকাটা ঘরের ঠিকানা দিতে হয় আমাদের। হাসপাতালে এর জন্য নির্ধারিত কক্ষ থাকলেও সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমাদের সন্তানরা মর্গের পাশ দিয়ে যাতায়াতে ভয় পায়। এখন দেখছি, আরও বড় ভবন বানানো হচ্ছে। কিন্তু চারপাশে উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে না। সমস্যা রয়েই গেল।’ ঝালকাঠি নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আবু জাফর বলেন, ‘বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ জেলায় হাসপাতালের ভেতরে বিশেষ কক্ষে মরদেহের কাটাকুটি হয়। অবিলম্বে এই মর্গটি সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হোক।’ ঝালকাঠির সিভিল সার্জন শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘সদর হাসপাতালে বহুতল একটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেটি নির্মাণ হলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্ষ বরাদ্দ থাকবে। এ মুহূর্তে মর্গটি অপসারণ করা সম্ভব নয়।’