ওয়ার্ড কাউন্সিলর হয়ে সস্ত্রাসীদের মতো আচরণ

কামরুন নাহার | ১১:০৪, এপ্রিল ০৮ ২০২০ মিনিট

সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক বয়স্ক ব্যক্তির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তিনি জনসমাগমে গিয়ে সবাইকে লাঠিপেটা করছেন। চারদিকে মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সবাই এদিক সেদিক পালানোর চেষ্টা করেন। যিনি পিটিয়েছেন তিনি টাঙ্গাইল পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং টাঙ্গাইল জেলা অটোরিক্সা-অটোটেম্পু ও সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন। গতকাল মঙ্গলবার টাঙ্গাইল শহরে ভরা বাজারে তিনি একটি মোটা বেতের লাঠি নিয়ে বের হন এবং মানুষকে মারধর করতে থাকেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি মূলত লকডাউন পরিকল্পনাকে সফল করতেই এই অভিযানে নেমেছিলেন। যদিও তার এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকজনকে তার সমর্থনে কথা বলতে দেখা যায়। আবার অনেকেই চটেছেন এই কাউন্সিলরের ওপর। কেউ কেউ বলছেন, করোনাভাইরাসের এই মহামারীতে দেশের বিভিন্ন স্থান লকডাউন করা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এটা এখানকার সবাই জানেন। কিন্তু সচেতনতা নেই কারো। এখন জীবনযাপন আর আগের মতো নেই। নিজের তো বটেই, কাছের মানুষটির নিরাপত্তার জন্যে হলেও সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে যে বের হওয়া যাবে না তা নয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! এখানে হাটবাজার পুরোদমে চলছে। মানুষ ভিড় করে বাজার-সদাইয়ে ব্যস্ত। দোকানে আড্ডাবাজি চলছে। এখন আমাদের বাঁচতে হলে বাড়ি যেতে হবে। বাধ্য হয়েই আমিন কাউন্সিলর এমন করেছেন। সবার ভালো জন্যেই তিনি করেছেন। কিন্তু অনেকের আপত্তি আছে এহেন কর্মকাণ্ডে। তাদের অভিযোগ, এখানে সবাই করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানেন। কিছু মানুষ হয়তো একেবারেই অজ্ঞ। কিন্তু তাদের বুঝিয়ে এবং প্রয়োজনে জোর করে বাড়িতে পাঠাতে হবে। এর জন্য মাঠে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী রয়েছে। তিনি নিজেও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে পারতেন। কিন্তু এভাবে পেটাতে পারেন না। সচেতন অনেকেই মাস্ক ও গ্লাভস পরে জরুরি কাজে বেরিয়েছেন। তাদেরও পিটিয়েছেন। তার কথা বলে বুঝে নেওয়া উচিত ছিল কারা সুরক্ষা সরঞ্জাম পরে জরুরি কাজে বেরিয়েছেন আর কারা এমনিতেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাজারে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য কিনতে আসা মানুষকেও লাঠিপেটা করেন এই শ্রমিকলীগ নেতা। তাদের অভিযোগ, বাজার-সদাইয়ে ব্যস্ত মানুষদের দোকানে ঢুকে পেটান তিনি। আতঙ্কিতরা বাঁচতে এদিক সেদিক দৌড় দিলে ধাওয়া করে পেটানো হয় তাদের। কাউন্সিলরের সাথে থাকারাও পেটাতে থাকেন। মটরসাইকেল আরোহী, সরকারি চাকরির ডিউটিতে থাকা মানুষ আইডি কার্ড দেখিয়েও আমিনের হাতে মার খেয়েছেন। ভ্যানচালক রিকাশায়ালা সবজি বিক্রেতারাও এসময় আমিনের লাঠির আঘাতে আহত হন। সবাই বলছেন, একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এটা সস্ত্রাসীদের মতো আচরণ। দেশের এমন অবস্থায় তিনি কাজে বের হওয়া মানুষদের এভাবে পেটাতে পারেন না।