পিরোজপুরে বড় মেয়ের বিচ্ছেদের মূল্য ছোট মেয়ের সঙ্গে বিয়ে

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৩১, মে ৩১ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বিয়ের চার মাসের মাথায় আর সংসার না করার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুলছাত্রী। তখন বিয়ের খরচ দাবি করে বসে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। দরিদ্র পিতা সেই খরচ দিতে না পারায় সালিস বসিয়ে ছোট বোনকে বিয়ে করে নিয়ে গেছেন তার স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ডুবি গ্রামে। ওই স্কুলছাত্রীর স্বামী সৈকত (১৯) ওই গ্রামের শাহাদাৎ হোসেনের ছেলে। আর ওই স্কুলছাত্রী উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের লাথারকান্দি গ্রামের এক দিনমজুরের মেয়ে। আর স্কুলছাত্রীর ছোট বোন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চার মাস আগে ডুবি গ্রামের শাহাদাৎ হোসেনের ছেলে সৈকতের সঙ্গে লাথারকান্দি গ্রামের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। কিছুদিন আগে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাবার বাড়ি আসে। কিন্তু এসে বলে আর স্বামীর বাড়ি যাবে না, সংসার করবে না। গত ২২ মে সৈকতের বাবা ও ভগ্নিপতি পুত্রবধূকে আনতে ছেলের শ্বশুরবাড়ি আসেন। কিন্তু স্কুলছাত্রী কোনোভাবেই স্বামীর বাড়ি ফিরতে রাজি হয় না। তখন সেখানেই সালিস ডাকেন সৈকতের বাবা। সালিসে মেয়ের বাবার কাছে বিয়ের খরচ দাবি করেন তিনি। কিন্তু মেয়ের দিনমজুর বাবা খরচ দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করলে ছোট মেয়েকে পুত্রবধূ করার দাবি তোলেন। সালিসে এই সিদ্ধান্তই হয়। তখন দরিদ্র পিতা তাঁর সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে সৈকতের সঙ্গে বিয়ে দিতে বাধ্য হন। জানতে চাইলে ঘটনার আদ্যোপান্ত স্বীকার করেন সৈকতের বাবা শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, ‘সৈকতের স্ত্রী আমার বাড়িতে আসতে অপারগতা প্রকাশ করে। এ সময় আমি উপস্থিত সবার সামনে ছেলের বিয়ের খরচ দাবি করি। আর না হয় ছেলেকে আবার বিয়ে দিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই। এ সময় মেয়ের বাবা টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অবশেষে আমরা তার ছোট মেয়েকে সৈকতের জন্য পুত্রবধূ করার দাবি তুলি। তখন উপস্থিত সালিসদারেরা তাতে রাজি হয়। পরদিন সকালে সালিসদারদের সিদ্ধান্ত অনুসারে সৈকতের স্ত্রীর ছোট বোনকে বউ করে নিয়ে নেছারাবাদে আসি।’ ওই স্কুলছাত্রীর বাবা ও মা বলেন, ছেলের বাবার দাবি অনুসারে টাকা দিতে পারলে আমাদের ছোট মেয়েকে বউ করে ওই বাড়িতে আর পাঠাতাম না। আমরা নিতান্ত গরিব। তাই সালিস বিচারের কথা অনুযায়ী ছোট মেয়েকে ওই ঘরে দিয়েছি। এটা খুবই লজ্জার। এ ব্যাপারে ওই সালিসে উপস্থিত থাকা লাথারকান্দি গ্রামের মো. রুহুলের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মেয়ের বাবা ও মায়ের সামনে ছেলের বাবা ছেলের বিয়ে ভাঙার খরচ দাবি করেন। অন্যথায় ছেলে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার খরচ চাচ্ছিলেন। তখন বিষয়টি আমার ভালো লাগেনি। তাই আমি সালিস থেকে চলে গিয়েছিলাম। পরদিন সকালে শুনি শাহাদাৎ তার ছেলে সৈকতের প্রথম স্ত্রীর ছোট বোনকে দ্বিতীয় স্ত্রী করে নিয়ে গেছে।’ এমন ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর নেছারাবাদের ডুবি গ্রামে নিন্দার ঝড় উঠেছে। লোকলজ্জায় সৈকতের বাবা শাহাদাৎ ছেলের দ্বিতীয় স্ত্রীকে এক আত্মীয়ার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সেই আত্মীয়ের বাড়িতে যোগাযোগ করে মোবাইল ফোনে মেয়েটির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। সে বলে, ‘আমার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে দুলাভাই সৈকতের কাছে আমাকে পাঠিয়েছে। এখানে এসে জানতে পারি আমি তার দ্বিতীয় বউ!’ গত ২২ মে রাতে উজিরপুর উপজেলার লাথারকান্দি গ্রামের বেপারীবাড়িতে সেই সালিসে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি মো. রুহুল, লুৎফা বেগম ও মোবারক ডাকুয়া। নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শাহাদাতের প্রথম পুত্রবধূ ছেলের ঘর করতে না চাওয়ায় সে সেই পুত্রবধূর ছোট বোনকে বউ করে বাড়িতে আনার পর এক রাত ছিল। পরদিন বিয়ে দিতে না পেরে সে মেয়েটিকে কোথায় যেন পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে কাজটা খুব ন্যক্কারজনক হয়েছে।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। বিষয়টি ইউপি সদস্যের কাছে জেনে জানাব।’