নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশালে ভোগান্তির আরেক নাম বেকুটিয়া ফেরিঘাট। এ ঘাট থেকে ফেরিতে একবার উঠতে না পারলে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টারও বেশি সময়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের।
তবে পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় নির্মিত অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ ভোগান্তির শেষ হতে চলছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি চালু হলে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ঘণ্টা ধরে ফেরির জন্য অপেক্ষা করে আর ভোগান্তিও থাকবে না তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের সঙ্গে খুলনার নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনসহ কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরকে সেতুটি সরাসরি সড়ক সংযুক্ত করবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) জানিয়েছে, ৯৯৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের ডবল লেনের সেতুটিতে ৯টি স্প্যান ও ১০টি পিলার বসানো হয়েছে। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ৮৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি টাকা গ্রান্ড অনুদান দিয়েছে চীন সরকার।
বাকি ২৪৪ কোটি টাকার জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ৪২৯ মিটার ভায়াডাক্টসহ সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪২৭ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার
সেতুটি উদ্বোধনের পর গাড়ি চলাচল শুরু হলে বরিশাল থেকে খুলনা যেতে বর্তমান সময়ের চেয়ে অর্ধেক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
বরিশাল-খুলনা রুটের তাহমিদ পরিবহনের চালক মো. হুমায়ুন বলেন, ‘এই পথে ফেরি পেতে যাত্রীদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হতো। যাত্রীতে পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ফেরি চলত না। এ ছাড়া প্রতিটি গাড়ি থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হতো। সেতু চালু হলে এসব অন্যায় কাজ বন্ধ হবে।’
বরিশালের রূপাতলী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন জানান, বাসে করে বরিশাল থেকে খুলনা যেতে এখন প্রায় চার ঘণ্টা সময় লাগে। বেকুটিয়ার সেতুটি চালু হলে সময় লাগবে মাত্র দুই ঘণ্টা। আর পিরোজপুর যেতে সময় লাগবে দেড় ঘণ্টা, আগে লাগত দুই ঘণ্টা।
তিনি আরও জানান, বরিশাল থেকে বেকুটিয়া যেতে বাসে সময় লাগে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট। সেখানে গিয়ে ফেরির অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় ঘণ্টারও বেশি সময়। এ সময় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অথচ সেতুটি উদ্বোধন হলে কোথাও দাঁড়াতে হবে না টোল ঘর ছাড়া।
শিপন বলেন, ‘এখন খুলনা অঞ্চলের মানুষ সাগরকন্যা কুয়াকাটায় লোকাল বাসে যেতে পারবে মাত্র ৫ ঘণ্টায়। তবে রিজার্ভ গাড়িতে যেতে সময় লাগবে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা।’
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ‘যাত্রীদের ভোগান্তি বাস মালিক ও চালকদেরও সহ্য করতে হয়। সেতুটি চালু হলে সড়ক পথে বরিশাল থেকে খুলনায় যেতে দুই ঘণ্টা সময়ও লাগবে না।’
অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ও বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম মাহমুদ সুমন বলেন, ‘সেতু জুনেই উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের পরিচ্ছন্নতা ও রঙের কাজ।’
জিটুজি পদ্ধতিতে সেতুটি নির্মাণ করে চীনের ‘চায়না রেলওয়ে সেভেনটিন ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।