পুত্র সন্তান না হওয়ায় গৃহবধূকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:০৫, মে ৩০ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় স্বামীর নির্যাতনে পারভীন বেগম নামের এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৃহবধূর মা কল্পনা বেগমের দাবি, ছেলেসন্তান না হওয়ায় তার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার (৩০ মে) সকালে পারভীন বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় কাজীর হাট থানা পুলিশ। এর আগে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল সদরে নেওয়ার পথে রোববার (২৯ মে) সন্ধ্যায় ওই গৃহবধূ মারা যান। পারভীন বেগম মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামের মানিক সিকদারের মেয়ে এবং একই গ্রামের আক্তার সরদারের স্ত্রী। আক্তার সরদার ও পারভীন বেগমের সংসারে তিন কন্যাসন্তান রয়েছে। পারভীন বেগমের মা কল্পনা বেগমের অভিযোগ, মেয়ে পারভীনের সঙ্গে আক্তার সরদারের বিয়ের পর তাদের সংসারে এক এক করে তিন কন্যাসন্তান জন্ম হয়। দ্বিতীয় কন্যাসন্তান হওয়ার পর থেকেই অসন্তুষ্ট ছিলেন জামাই আক্তার সরদার। এরপর তৃতীয় সন্তান হলে পারভীনের ওপর নির্যাতন চালাতে শুরু করে আক্তার। ছেলেসন্তান না হওয়ায় তিনবেলা খাবার খেতে দেওয়া হতো না পারভীনকে। সম্প্রতি নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন আক্তার সরদার। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) আক্তার সরদার তিন মেয়ে ও স্ত্রী পারভীনের ভরণপোষণ বহন করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এতে পারভীন প্রতিবাদ করলে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ পরিস্থিতিতে ওইদিনই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন পারভীন। বাড়িতে এসে নির্যাতনের বিষয়টি পরিবারকে জানান এবং তার শরীরের আঘাতের চিহ্নগুলো দেখায়। পরে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে তিন সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরেরদিন পারভীন তার স্বামীর বাড়িতে ফিরে যান। রোববার বিকেলে কল্পনা বেগম খবর পান পারভীনকে ফের মারধর করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে তার মৃত্যুর খবর পান। পারভীন বেগমের ভাই মো. রিয়াজ বলেন, ‘ছেলেসন্তান না হওয়ায় আমার বোনকে অমানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। এছাড়া দুলাভাই আক্তার পাকাবাড়ি নির্মাণের জন্য বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে চাপ দিচ্ছিলেন। আমার বোন পারভীন এতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এসব কারণে আক্তার সরদার ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বোনকে মারধর করে হত্যা করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ধরা পড়ার ভয়ে আক্তার সরদার রোববার রাতে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি। তাকে গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।’ অভিযুক্ত আক্তার সরদার এলাকায় না থাকায় এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় পারভীন বেগমের মৃত্যুর বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি। কাজীর হাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পারভীন বেগমের মৃত্যুর জন্য তার মা ও ভাই আক্তার সরদারকে দায়ী করছেন। তবে পারভীন বেগমের শ্বশুরবাড়ির লোকজন দাবি করছেন স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়েছে। তাই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া কী কারণে পারভীন বেগমের মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।