কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী আজ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৭:৪৪, মে ২৫ ২০২২ মিনিট

‘আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর!/ আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাতৃর!/ আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর/ বল বীর- চির-উন্নত মম শির!’ কাজী নজরুল ইসলাম মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৫০ পঙ্‌ক্তির তাঁর বিখ্যাত ভুবনবিজয়ী বিদ্রোহী কবিতা লেখেন। এ কবিতার মাধ্যমে তিনি অসত্য, অকল্যাণ, অশান্তি, অমঙ্গল, অন্যায় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠ উচ্চারণ করেন। শৃঙ্খল-পরা আমিত্বকে মুক্তি দিতে চান তিনি। তিনি এ কবিতাটি ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে লেখেন।

১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি তাঁর এ ‘বিদ্রোহ’ কবিতাটি বিজলী পত্রিকায় প্রকাশ হয়। বিদ্রোহী এ কবিতাটির প্রকাশের শতবর্ষে পদার্পণ করেছে এ বছর। কবি নজরুল ধূমকেতুর মতো বাংলায় আবির্ভূত হয়েছিলেন সাম্য ও মানবতার গান নিয়ে। লিখেছিলেন, ‘গাহি সাম্যের গান-/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।’ রোমান্টিক কবি-প্রতিভায় সৌন্দর্য, প্রেমের জন্য সুতীব্র বাসনাও ফুটে ওঠে তাঁর কবিতায়। প্রেম, মুক্তি ও বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জয়ন্তী আজ বুধবার। তিনি শুধু সাহিত্যে নন, বাঙালির রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলনেও প্রভাব বিস্তার করেন। বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন। শৈশব থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে বেড়ে ওঠেন তিনি। আর সেই পথপরিক্রমায় তিনি হয়ে ওঠেন অসাম্প্রদায়িক ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী। কাজী নজরুল ইসলাম সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করলেও তাঁর পরিচিতি মূলত কবি হিসেবে। ১৯২২ সালে তাঁর বিখ্যাত কবিতা-সংকলন ‘অগ্নিবীণা’ প্রকাশিত হয়, যা বাংলা কবিতায় এক নতুন ধারার সৃষ্টি করে। তাঁর রচিত ‘চল, চল, চল’ বাংলাদেশের রণসংগীত। প্রায় ৩ হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন তিনি। ইসলামী সংগীত বা গজল রচনা করে তিনি নতুন এক ধারার সূচনা করেন। একই সঙ্গে সমানতালে রচনা করেন শ্যামাসংগীত। মধ্যবয়সে তিনি পিকস ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাঁকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। এক সময় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। ১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং ‘একুশে পদক’ দেওয়া হয়। একই বছরের ২৯ আগস্ট মারা যান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।