করোনা মোকাবেলায় একাট্টা জেলা প্রশাসন ও নগর পুলিশ

কামরুন নাহার | ২১:৩১, এপ্রিল ০৬ ২০২০ মিনিট

এস.এন.পলাশ ॥ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, গণসচেতনতা সৃষ্টি ও বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে থাকাসহ নানা ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ। করোনা থেকে বরিশালবাসীকে শঙ্কামুক্ত রাখতে পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান ও জেলা প্রশাসক এস.এম.অজিয়র রহমান নিরন্তর ছুটে চলছেন মানুষের দোরগোড়ায়। বিশ্বজুড়ে যখন করোনা ভাইরাস (কোভিট-১৯) আতংকের রুপ নিয়েছে তখন থেকেই লক্ষ্য করা গেছে দিন-রাত মাঠ পর্যায়ে কঠোর পরিশ্রম করছেন নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ। প্রথম পর্যায়ে লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ থেকে শুরু করে জনসচেতনতায় অসংখ্যবার সভা ও সমাবেশ করা হয়েছে। বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য দফায় দফায় পরামর্শ ও গণপরিবহন থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে আড্ডা বন্ধের জন্য মাইকিংও করা হয়েছে। করোনাকে পুঁজি করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং করোনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট প্রসাধনীর দাম না বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। এদিকে নগরীর বিভিন্ন অলি-গলিতে জনসাধারণকে ঘরে অবস্থান করার অনুরোধসহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে করণীয় বর্জনীয় পরামর্শ নিয়ে বিএমপি’র উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট থানার অফিসারবৃন্দ’র সক্রিয় অংশগ্রহণে চলছে নিয়মিত মহড়া। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সড়কে টহল বাড়িয়েছে বরিশাল মহানগর পুলিশ (বিএমপি)। ঘর ছেড়ে প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি বাড়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আজ সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেসব সড়কে গত কয়েকদিনে পুলিশের টহল ছিল না সেসব সড়কেও পুলিশের কর্মকাণ্ড বাড়ানো হয়েছে। সন্ধ্যার পর কেবলমাত্র ওষুধের দোকান ছাড়া সকল ধরনের দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার মো: শাহাবুদ্দিন খান বলেন, নগরবাসিকে ঘরে রাখতে ইতিমধ্যে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সকল ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া আগামিকাল থেকে বরিশালে ঢোকার এবং বাহির হবার সকল ধরনের প্রবেশ পথ বন্ধ করা হবে। এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য জেলা প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে ২৪ মার্চ সকাল থেকে বরিশালের সকল অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ ও বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলার প্রতিটি মার্কেট ও চায়ের দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে এক প্রকার লকডাউনে রয়েছে পুরো বরিশাল। করোনা প্রতিরোধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গনপরিবহন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। অনাহারে দিন কাটছে তাদের। তাদের দুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে জেলা প্রশাসনের বিরামহীন প্রচেষ্টা সবাইকে বিস্মিত করেছে। জেলা প্রশাসক এস.এম.অজিয়র রহমানের নির্দেশে পুরো জেলার ১০টি উপজেলায় চলছে ত্রান বিতরণ কার্যক্রম। ইতিমধ্যে ৩০২৯ টি নিন্ম আয়ের ও কর্মহীন দরিদ্র পরিবারের মাঝে ত্রান বিতরন করা হয়েছে। এছাড়াও কে,ডি,সি বস্তিতে ১৬৬ টি পরিবারের মাঝে নগদ ১৫০০ টাকা করে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে গৃহে অবস্থান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক এস.এম.অজিয়র রহমানের নির্দেশনায় বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী অফিসারগন কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রান বিতরন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল রবিবার সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া, চরকাউয়া ও মহানগর এলাকায় ৭০০ অসহায়, দরিদ্র ও কর্মহীন পরিবারের মাঝে ৭ মেট্রিকটন চালসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী এবং ১,০০,০০০ টাকা বিতরণ করেন সদর উপজেলার সহকারী কমশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান। আগৈলঝড়া উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী রওশন ইসলাম উপজেলার রতœপুর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামে ২৬ টি কর্মহীন দরিদ্র পরিবারে চালসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। বাকেরগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাধবী রায় উপজেলার কলসকাঠী এবং চরামদ্দি ইউনিয়নে ৭০ টি পরিবারের মাঝে চালসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। গৌরনদী উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান উপজেলার কসবা ইউনিয়নে বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ৬০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী ৬০০ টি পরিবারের মাঝে বিতরণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছেন। এসব অভিযানে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে অপ্রয়োজনীয় দোকান খোলা রাখা, জনসমাগম করা, সামাজিক দুরত্ব বজায় না রাখা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ না করা, ট্রাক ও পিকআপে যাত্রী পরিবহনের অপরাধে ৩৪ জনকে ৬৯ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়। বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জনগনকে ঘরে রাখতে আমাদের আরেকটু কঠোর ভূমিকা নিয়ে এগোতে হবে। পাশাপাশি জনগনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে যাতে জনগন ঘরে থাকতে অভ্যস্থ হয়। এ সময় তিনি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকলকে বাড়িতে থাকার আহ্বান জানান।