৩ বছরে মেলেনি ১ ফোঁটা পানি

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০০:২৫, মে ২২ ২০২২ মিনিট

বিধান সরকার ॥ বছর গুণলে প্রায় ৩ হবে। জনস্ব্যা প্রকৌশল বিভাগ ২টি পানি শোধনাগারই চালু অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছিল। শোধনাগার ২টি নির্মাণে লেগেছিল ৫২ কোটি টাকা। এটি পুনরায় মেরামতের জন্য ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী ৩৯ কোটি ৭ লাখ ১১ হাজার টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সিটি কর্পোরেশন। পানি শোধনাগার ২টি চালু থাকলে ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যেতো। চলমান গ্রীষ্মে বিসিসি’র সরবরাহ করায় ঘাটতি থাকা ২ কোটি ৮৫ লাখ ৪০ হাজার লিটার পানির সমাধান মিলতো। এনিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ‘ক’ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল বাশার বলেন, আশা করছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রকল্পের অর্থ শীঘ্রই পাবেন। তাহলেই ফের চালু করতে পারবেন ২টি পানি শোধনাগার এমন আশাই তিনি করছেন। পুরো ৫০ বছরের কার্যক্ষম এই পানি শোধনাগার ২টি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছিল। এই অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাইনুল হাসান জানান, নগরবাসীর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে এবং ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে ৫২ কোটি টাকায় ২টি পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে বেলতলারটি ২০১০-১১ অর্থ বছরে নির্মাণ খরচ লেগেছিল ২৭ কোটি টাকা। অপরটি রূপাতলী এলাকায় ২০১২-১৩ অর্থ বছরে নির্মাণ খরচ ধরেছিল ২৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ৫২ কোটি টাকার এই পানি শোধনাগার দুটি ২০১৬ সালে জুনে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন ঠিকাদার। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দেয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। এরপর থেকে পরীক্ষমূলকভাবে চালানো হয় যথারীতি। তবে পানি শোধনাগার ২টি বুঝে নেয়ার ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে আপত্তি ওঠে। এজন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সিটি কর্পোরেশনের ৩ জন এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৩ কর্মকর্তা সমন্বয়ে সভা হয়। এই সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমঝোতা স্বাক্ষরের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন পানি শোধনাগার ২টি বুঝে নেয়। এসময় সিদ্ধান্ত হয় এর মেরামতের প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে নতুবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প জমা দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিদ্ধান্তের ২ মাসের মধ্যে সিটি কর্পোরেশন মেরামতের জন্য ৩৯ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দিয়েছেন। তবে তারা পানি শোধনাগার ২টি চালু অবস্থায় বুঝিয়ে দিলেও এরপর আর সিটি কর্পোরেশন উৎপাদনে যায়নি। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে কীর্তনখোলা নদীর পানি শোধন করে নগরবাসীদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার জন্য ১শ কিলোমিটার পাইপ বসানো হয়েছে। পানি শোধনের জন্য চুন, ক্লোরিন আর খাবার সোডা ব্যবহার হয় মাত্র। পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া নিধন করবে ক্লোরিন এবং নদীর ঘোলাটে পানি পরিস্কার করবে সোডা। প্রতিটি পানি শোধনাগার থেকে চব্বিশ ঘণ্টায় ১ কোটি ৬০ লাখ লিটার হলে ২টি থেকে ৩ কোটি ২০ লাখ বিশুদ্ধ পানি মিলবে। এক্ষত্রে সিটি কর্পোরেশনের পানি শাখায় কর্মরত মুন্না হাওলাদার জানায়, তাদের যে ৭টি উচ্চ জলাধার (ওভার হেড ট্যাঙ্ক) রয়েছে সেখানে ১ কোটি ৩২ লাখ লিটার পানি ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে পানি ধরে রাখতে অরো উচ্চ জলাধারের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে তাদের চলমান ৩৭টি পাম্প। এই গ্রীষ্মে জনপ্রতি প্রতিদিন ৯০ লিটার পানির হিসেবে ৫ কোটি ৪০ লাখ লিটার পানির প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে তারা ২ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার পানি নগরবাসিদের সরবরাহ করছেন। এই হিসেবে প্রতিদিন ২ কোটি ৮৫ লাখ ৪০ হাজার লিটার পানির ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। গ্রীষ্মে পানির অবস্থান নিয়ে আঞ্চলিক পানি পরীক্ষাগারের সিনিয়র রসায়নবিদ শামসুদ্দিন আহমেদের হিসেব হলো পানির সুস্থিতিতল (ওয়াটার লেভেল) বরিশাল নগরীতে বর্ষা মৌসূমে থাকে ৩০ ফুটে। গ্রীষ্মে এটি ১০ ফুট নেমে ৪০ ফুটে অবস্থান নেয়। আর হস্তচালিত বিশুদ্ধ নলকূপে সহজে পানি পেতে এই সুস্থিতিতল ২৮ ফুটের মধ্যে থাকার প্রয়োজন। এজন্যই গ্রীষ্ম মৌসূমে নগরীর নলকূপে পানি মেলেনা। বিকল্প হিসেবে সাবমারসিবল পাম্প বসায়ে পানি তুলতে হয়। এভাবে সাবমারসিবল পাম্প বসায়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলণ করলে সিঙ্কহোল তৈরী হয়ে ভয়ানক ভূমিধ্বস হতে পারে এমন অভিমত বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বিভাগীয় সমন্বয়ক রফিকুল আলমের। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে পানির সুস্থিতিতল নেমেছিল ৩৫ ফুটে যা ৩ বছরে ৪০ নয়; ১০ ফুট কমে ৪৫ ফুটে নেমেছে। পানির সংকট নিয়ে নগরীতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ম বা বাঁধা আয়ের নাগরিকেরা। যারা চলমান পানির সংকট সময়ে নলকূপে পানি না ওঠায় পয়সার অভাবে সাবমারসিবল পাম্প বসাতে পারে না। এমন বেশ কয়েক জনের সাথে কথা বলে উত্তরের যে মমার্থ তা হলো সিটির সাপ্লাইর পানিতে কখনোবা আসে ময়লা ও দুর্গন্ধ। বাধ্য হয়ে পরের বাড়িতে খাবার পানি আনতে গেলে শুনতে হয় গাল-মন্দ।