বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নেয়া তরুণীর জামিন

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:০০, মে ১৭ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ আসামিপক্ষের আইনজীবী এম মজিবুল হক কিসলু জানান, বেলা ১১টার দিকে তরুণীকে আদালতে নেয়া হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তরুণীকে জামিন দেন। জামিনে কোনো শর্ত দেয়া হয়নি। বিয়ের দাবিতে বরগুনায় প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নেয়া জামালপুরের সেই তরুণীকে জামিন দিয়েছে আদালত। বরগুনা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মাহবুবুর রহমান মঙ্গলবার দুপুরে তরুণীকে জামিন দেন। আগের দিন আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তিনি। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এম মজিবুল হক কিসলু। তিনি জানান, বেলা ১১টার দিকে তরুণীকে আদালতে নেয়া হয়। এরপর উভয় পক্ষের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি শেষে বিচারক মাহবুবুর রহমান তরুণী ও তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি জামিন দেন। জামিনের কোনো শর্ত দেয়া হয়নি বলেও জানান এ আইনজীবী। তবে আইন ভঙ্গ হয় এমন কোনো কাজ থেকে তাকে বিরত থাকতে বলা হয়। একই সঙ্গে কারো বিরুদ্ধে তার অভিযোগ থাকলে আইনি পদ্ধতিতে এগোতে বলা হয়েছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী সাইমুল ইসলাম রাব্বি বলেন, ‘আমরা আদালতে বলেছি, আসামির ভাইয়ের জিম্মায় জামিন দেয়া হলে বাদীপক্ষের আপত্তি নেই। পরে আদালত তাকে জামিন দেয়।’ তরুণীর বড় ভাই বলেন, ‘ছেলে মাহমুদুল হাসানের মামা আমাকে ফোন করে আলোচনার জন্য তাদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে আসার আগেই তারা আমার বোনের নামে মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। আমার বোন আমাদের বলেছে, সে বিয়ে করেছে, শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছে। তাই আমরা আর দুশ্চিন্তা করিনি।’ মাহমুদুল হাসানের পরিবারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ এর আগে শুক্রবার ভোরে বেতাগী থানা পুলিশ চান্দখালি এলাকার মাহমুদুল হাসানের বাড়ি থেকে ওই তরুণীকে গ্রেপ্তার করে। পরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হলে বিচারক নাহিদ ইসলাম তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মাহমুদুল হাসানকে প্রেমিক দাবি করে গত ২৮ এপ্রিল থেকে বিয়ের জন্য তার বাড়িতে অবস্থান নিয়ে ছিলেন ওই তরুণী। বেতাগী থানার শাহ আলম হাওলাদার জানান, ওই তরুণীর বিরুদ্ধে মাহমুদুলের বাবা মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবার মামলা করেছেন। তাতে জিম্মি করে তালা ভেঙে বাসায় প্রবেশ, আসবাবপত্র ভাঙচুর ও আত্মহত্যার হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই মামলায় মেয়েটিকে গ্রেপ্তার করা হয়। যা ঘটেছিল ওই তরুণী জানিয়েছিলেন, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে তার গ্রামের বাড়ি। ঢাকার উত্তরায় থাকেন এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। মেয়েটির দাবি, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। তিন বছর প্রেমের পর সম্প্রতি বিয়ের কথা বললে নানা অজুহাতে তরুণীকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন মাহমুদুল। রোজার শুরুতে যুবকটি গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। এরপর গত ২৮ এপ্রিল ওই তরুণী বেতাগীর চান্দখালীতে মাহমুদুল হাসানের বাসার সামনে বিয়ের দাবি নিয়ে অবস্থান নেন। তবে সে সময় মাহমুদুলের বাসা তালাবদ্ধ পান। গত রোববার দুপুরে ওই তরুণী জানান, তিন দিনেও মাহমুদুল বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাননি। ফলে বাধ্য হয়ে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন এবং নির্ধারিত সময়ে তার দাবি মেনে না নেয়া হলে বাসার সামনেই আত্মহত্যা করবেন। সেদিন মেয়েটির খোঁজ নিতে গেলে মাহমুদুলের মামা আবদুস সোবাহান গাজীকে স্থানীয়দের সহায়তায় অবরুদ্ধ করে রাখেন সেই তরুণী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাহমুদুলকে হাজির করার আলটিমেটাম দেন। বেতাগী থানার ওসি জানান, ওই তরুণীর বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার চেয়ে গত মঙ্গলবার আদালতে আবেদন করেন মাহমুদুল হাসানের বাবা মোশাররফ হোসেন। বিচারক সেদিনই মূখ্য বিচারিক হাকিম আদালত মাহবুবুর রহমান বেতাগী থানার ওসি আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেন। বাদীর আইনজীবী সাইমুল ইসলাম রাব্বি মঙ্গলবার  জানান, ওই তরুণী মাহমুদুলের মামাকে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়দের সহায়তায় তালা ভেঙে ওই বাড়িতে ঢোকেন। বিয়ের দাবি মেনে না নিলে সেখানেই আত্মহত্যার হুমকি দেন। বাড়ি ফিরলে মাহমুদুলের মা-বাবাকেও মেয়েটি অবরুদ্ধ করেন। ওসি শাহ আলম  জানান, মেয়েটির নামে ৪৮৪, ৩০৯, ৩৪৪, ৪২৭, ২৯০, ৫০৬ ধারায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তাতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪ থেকে ৫ জনকে।