বরিশালে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত সাত পুলিশ সদস্য

কামরুন নাহার | ২০:৫৪, এপ্রিল ০৫ ২০২০ মিনিট

গৌরনদী প্রতিনিধি ॥ নব্য আওয়ামী লীগ নেতার বালু বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে জেলার গৌরনদীতে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুইটি বাড়ি, ছাত্রলীগ নেতার একটি ব্যক্তিগত অফিস ও ১৭টি মোটরসাইকেল ভাংচুর, দুইপক্ষের হামলায় ছাত্রলীগ নেতার মাসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহতর ঘটনায় রবিবার সকালে ও শনিবার রাতে পাল্টাপাল্টি তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি ছাত্রলীগ নেতা সুমন মাহমুদের মা আহত মিনারা বেগম বাদি হয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০জনকে আসামি করেছেন। উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন-পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতিকুর রহমান শামিম, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের ইসলাম সান্টু ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান দিপ। অপরদিকে মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনায় দক্ষিণ পালরদী গ্রামের সাদ্দাম হোসেন বাদি হয়ে ছাত্রলীগের ৩২জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০/১৫জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় উল্লেখযোগ্যরা হলেন-সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি ছাত্রলীগ নেতা সুমন মাহমুদ, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন খলিফা ও সাবেক এজিএস রিয়াদ হাওলাদার। অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুজ্জামান ঝিলাম বাদি হয়ে ছাত্রলীগের ১৮জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলার উল্লেখযোগ্যরা হলেন-সুমন মাহমুদ ও মিলন খলিফা গং। অপরদিকে হামলার সময় থানার সাতজন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ছাত্রলীগ নেতা সুমন মাহমুদ জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহুর্তে বরিশাল-১ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের অর্থদাতা প্রভাবশালী বিএনপি ক্যাডার রাশেদুজ্জামান ঝিলাম খোলস পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করে। অতিসম্প্রতি সে (ঝিলাম) পৌর সদরের উত্তর বিজয়পুর মহল্লায় বালু ভরাট বাণিজ্যের কাজ শুরু করেন। গতকাল শনিবার দুপুরে তাকে (ঝিলাম) ফোন দিয়ে ছাত্রলীগের ২/১জন অসহায় কর্মীকে এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য অনুরোধ করা হয়। এসময় ঝিলাম তাকে (সুমন) তার টরকী বন্দরের বাসায় আসার জন্য বলেন। সুমন মাহমুদ আরও জানান, ঝিলামের কথামতো পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন খলিফাকে নিয়ে তিনি ঝিলামের টরকী বাসায় প্রবেশের সাথে সাথে সে বাসার দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এসময় তার (সুমন) কাছে ফোন আসে ঝিলামকে উপজেলা ছাত্রলীগের অপর পক্ষের লোকজন তার বাসায় আটক করে রাখতে বলেছেন। সুমন আরও জানায়, এ খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক সে ঝিলামকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে দ্রুত অপর ছাত্রলীগ নেতা মিলন খলিফাকে নিয়ে স্থান ত্যাগ করে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। পরবর্তীতে সে (সুমন) খবর পায় তার গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা তাদের সহযোগিদের নিয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুরসহ তার সমর্থক সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সুজনকে বেধম মারধর করেছে। কিছু সময় পর খবর পান তার (সুমন) শ্বশুরের উত্তর বিজয়পুরের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে। পরবর্তীতে হামলাকারীরা ৩০/৪০টি মোটরসাইকেলযোগে তার নিজ বাড়িতে প্রবেশের সময় দুইপক্ষের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে চেষ্টা করেন। উভয়ঈক্ষের হামলা ও সংঘর্ষে সাতজন পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ২৭জন আহত ও ১৭টি মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। সুমন আরও জানায়, থানা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করার পর হামলাকারীরা তাদের বসতঘর ভাংচুরসহ তার মাকে বেধম মারধর করেছে। হামলায় গুরুতর আহত ছাত্রলীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন সুজন ও তার মাকে গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে পুলিশ সুজনের ভাই শাওন হাওলাদার ও মঈন হাওলাদারকে আটক করে নিয়েছেন বলেও সুমন জানিয়েছেন। অপরদিকে হামলা ও সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে গুরুতর আহত সাত পুলিশ সদস্যকে প্রথমে গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ কনস্টবল মোঃ মাহবুব হোসেনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার সাথে উপজেলা ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নেই দাবি করে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের ইসলাম সান্টু ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান দিপ বলেন, শুনেছি চাঁদার দাবিতে আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুজ্জামান ঝিলামের ওপর সুমন মাহমুদসহ অন্যান্যরা হামলা চালিয়েছে। পরবর্তীতে এ ঘটনার প্রতিবাদে কি হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান শামীম বলেন, হামলার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। গৌরনদী মডেল থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে সাতজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এরমধ্যে একজনকে বরিশাল ও ছয়জনকে গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।