বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা চিটার হৃদয়
দেশ জনপদ ডেস্ক|১০:৩০, এপ্রিল ২২ ২০২২ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশালে সক্রিয় প্রতারক চক্র’র বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে নানাবিধ অভিযোগ। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি নারী ও ব্যবসায়ীরা। কখনও ঠিকাদার, কখনও বড় ব্যবসায়ী আবার কখনবা রাজনীতিবিদ এই পরিচয়ে সক্রিয় বরিশালে নতুন প্রতারক চক্র।
তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে নি:স্ব বরিশাল সদর উপজেলাসহ বেশ কয়েটি উপজেলার সাধারন মানুষরা। আর এমন প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরজমিনে খোঁজ নিয়ে উঠে আসে বেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বরিশাল নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ড ঝাউতলা ৩য় গলির বাসিন্দা শেখ তৌহিদুল ইসলাম ওরফে শেখ হৃদয় ও নগরীর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ এলাকার বাসিন্দা মো: ইউসুফ আলী এর ছেলে ইমরুল ইসলাম জিকু এই প্রতারক চক্রের মূল হোতা।
অল্প বিনিয়োগে মোটা অংকের টাকা লাভের প্রলোভনে প্রতারণার ফাঁদ পাতে এই চক্রটি। আর কেউ তাদের ফাঁদে পা দিলে হতে হয় নি:স্ব। এমনই এক ভুক্তভোগী বরিশাল নগরীর আলেকান্দা কাজী পাড়া এলাকার বাসিন্দা বিধবা কাজী হাবিবা আক্তার এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে নি:স্ব হয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়ে উদ্ধার করতে পারছেন না টাকা। উল্টো মারধর ও হামলার শিকারও হয়েছেন কয়েকবার। গত বছরের মে ও জুন মাসে বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারী ব্যবসা ও জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম সংলগ্ন দোকান ক্রয়ের কথা বলে তার কাছ থেকে মোট ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি।
নগরীর কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা ডাঃ মো: মোস্তাফা এর ছেলে হাসান মো: জিহান এর কাছ থেকে ঠিকাদারী ও ব্যাক্তিগত প্রয়োজনের কথা বলে বিভিন্ন সময়ে হাতিয়ে নেয় ১৯ লাখ টাকা। ভুক্তভোগী বাদী হয়ে আদালতের মাধ্যমে প্রতারক চক্রটির অন্যতম সদস্য তৌহিদুল ইসলাম হৃদয় এর নামে গত ১৭ এপ্রিল ২০২২ উকিল নোটিশ পাঠায়।
আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের বাসিন্দা সরদার মনোয়ার এর ছেলে মো: ইমন সরদার এর কাছ থেকে ঠিকাদারী কাজ বিক্রির কথা বলে বরিশাল জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত বিভিন্ন উপজেলার ১৪ টি ভূয়া ঠিকাদারী কার্যাদেশ দেখিয়ে প্রতারক হৃদয় ও জিকু বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
সে টাকা বা ঠিকাদারী কাজের কোন অংশে তাকে ভাগীদার রাখেনী চক্রটি। অপরদিকে নগরীর নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শাহজাহান হাওলাদার এর ছেলে জহিরুল ইসলাম সুনামের কাছ থেকেও কৌশলে বিভিন্ন মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় আরো ১৮ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগী বাধ্য হয়ে গত বছর বরিশাল বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদী হয়ে প্রতারকদের বিরুদ্ধে চারটি চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৮/২০২২, ৯/২০২২ ,৬০/২০২২ ও ৬১/২০২২।
নগরীর নতুন বাজার এলাকার ব্যবসায়ী নিসা নাফি ভ্যারাইটিজ স্টোর মালিক মো: রহমান মৃধা এর ছেলে মো: নাসির উদ্দিন এর দোকান থেকে ৫০ হাজার টাকার চেক জমা দিয়ে ৫০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে নেয় চক্রটির সদস্য জিকু।
শুধু তাই নয় স্থাণীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে নগরীর পলাশপুর বউ বাজার এলাকার ইট, সিমেন্ট ব্যবসায়ী, ভাতের হোটেল, বিকাশ’র দোকান, মুদি দোকান ও হার্ডওয়্যার এর দোকানসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছে আরো কয়েক লক্ষাধিক টাকা। পলাশপুর এলাকার ভুক্তভোগী ইট, সিমেন্ট ব্যবসায়ী নয়ন ট্রেডার্স এর মালিক নয়ন বলেন, প্রতারক হৃদয় ও জিকু ২০১৮ সালে বরিশাল জেলা পরিষদের আহব্বানকৃত আলহাজ¦ দলিল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মানের কাজটি শুরু করে।
এরপর প্রায় সময়ই সিমেন্ট বাকিতে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা বকেয়া রাখে। অপরদিকে একই এলাকার বিকাশ ব্যবসায়ী মুন টেলিকমের মালিক মিলন হোসেন জানান, বিভিন্ন সময়ে লেবারদের বিল দেয়ার কথা বলে ৩০ হাজার টাকার চেক জমা রেখে ৫২ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে নেয়। আর পরে ওই চেকের টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। কারন ওই চেকের বিপরীতে একাউন্টে কোন টাকাই ছিলো না।
একই এলাকার জননী হোটেল থেকে ১০ হাজার, মুদি দোকান থেকে ১৫ হাজার, ভাষানচর হার্ডওয়্যার থেকে ১০ হাজার টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়।
আর এই টাকা যখন ওই প্রতারকদের কাছে চাওয়া হয়, তখনই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে হয়রানী করে চক্রটি।
অপরদিকে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বাবুগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ এলাকার ব্যবসায়ী মেহেদী ট্রেডার্স এর মালিক মো: আরিফ হোসেন এর কাছ থেকে ঠিকাদারী কাজের কথা বলে চেক জমা দিয়ে দুই লাখ টাকার ইট সিমেন্ট বাকি নিয়ে সেই টাকা আদৌ পরিশোধ করেনি ওই চক্রটি পরে ভুক্তভোগী বাধ্য হয়ে আইনের দারস্থ হয়। এরপর গত বছরের ২ ডিসেম্বর তাদেরকে উকিল নোটিশ পাঠায়। একই উপজেলার রাকুদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো: মোকসেদ হাওলাদার এর ছেলে মটরসাইকেল ড্রাইভার সজীব এর কাছ থেকেও প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় ২৯ হাজার টাকা।
মুলাদী উপজেলার ৬ নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা ইট সিমেন্ট ব্যবসায়ী আ: জব্বার খান এর ছেলে মো: সোলাইমান খান এর কাছ থেকে ঠিকাদারী কাজের বাবদ বাকিতে ইট সিমেন্ট নিয়ে ৭৮ হাজার টাকার চেকের বিনিময়ে মালামাল নেয়। পরবর্তিতে ওই চেক ক্যাশ করতে গেলে সেখানেও টাকা উত্তোলন সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে ভোলা জেলার লালমোহনের বাসিন্দা মো: সিরাজ মাঝির পাওনা টাকা উঠিয়ে দেয়ার কথা বলে প্রতারক হৃদয় ও জিকু হাতিয়ে নেয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
সূত্রে জানায়, প্রতারক ইমরুল ইসলাম জিকু একাধিক চেক জালিয়াতির মামলার আসামী। এ বিষয়ে সচেতন সমাজ মনে করছেন অতিদ্রুত এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। ও হৃদয় তার বাবার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সকলকে হুমকি ধামকি দেয়।
বিস্তর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৌহিদুল ইসলাম হৃদয় এর মুঠোফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ফোনটি রিসিভ করে পরে আপনাকে ফোন দিচ্ছি বলে ফোনের লাইনটি কেটে দেয়। অপরদিকে অভিযুক্ত ইমরুল হাসান জিকু এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি এক সময় হৃদয় এর ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলাম।
হৃদয় এর সাথে আমার কোন লেনদেন নেই। আর তিনি যদি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কোন কিছু করে থাকেন তার দায়ভার আমি ক্যানো নিবো।
মুঠোফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আপনি নিউজটা একটু হোল্ড করেন, আমি বরিশালে এসে আপনার সাথে সামনা সামনি বসে কথা বলবো”। এ বিষয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।