দলীয় সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে সরোয়ারের কুটকৌশল

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:০৮, মার্চ ৩০ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রায় ত্রিশ বছরের সাম্রাজ্য ফিরে পেতে বরিশাল মহানগর বিএনপি'তে কুটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন নগর কমিটি থেকে ছিটকে পরা মজিবর রহমান সরোয়ার। এনিয়ে, নতুন নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, বরিশালে বিএনপি’র রাজনীতিতে সংগঠনের মধ্যে উপসংগঠন অর্থাৎ গ্র“পিং থাকবে না। সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করবো। যেটা বিগত দিনগুলোতে ছিলোনা। বর্তমানে বরিশাল মহানগরে ওয়ার্ড পর্যায়ের সকল কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে নতুন কমিটি করার জন্য। শীঘ্রই কিমিটিগুলো নিয়ে দ্বায়িত্বপ্রাপ্তদের সাংগঠনিকভাবে অধিকতর সক্রিয় করা হবে। এখন আমাদের ঘর গোছানোটা জরুরী। কিন্তু নগর কমিটি থেকে ছিটকে পরে এখন কুটকৌশলের মাধ্যমে ফের কমিটিতে আসীন হওয়ার জন্য সরোয়ার মরিয়া হয়ে উঠেছে মর্মে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, দেখেন আমরা শহীদ জিয়ার আদর্শের রাজনীতি করি। দল আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে এখানে এ বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে চলছি। এরপরেও আমরা বিভিন্নভাবে খবর পাই যে, সে বাসায় বসে নিজস্ব অনুসারীদের নিয়ে মিটিং করে এবং আমাদের প্রোগ্রামগুলোতে যাতে লোকবল তেমন উপস্থিত না হয় সে ব্যাপারেও মানুষিকভাবে নিস্ক্রিয় করার প্রয়াস তিনি করছেন। সরোয়ার ভাই আমাদের কেন্দ্রিয় নেতা সে যখন বরিশালে থাকে তখন আমরা তাকে প্রোগ্রামে ডাকি ইচ্ছে হলে আসে। সরোয়ার বিরোধী বলয়ে রয়েছে, নব্বইয়ের দশকে ছাত্রদল করা একাধিক নেতা জোট বাঁধেন। চলতি বছরের শুরুতে সরোয়ার-বিরোধী এই বলয়ে যুক্ত হয়েছে নগর বিএনপি’র তৎকালীন নেতা মনিরুজ্জামান ফারুকসহ অনেকে। সরোয়ার বিরোধী এ বলয়ের পালে রয়েছে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার শিরিনও। তাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শেষমেষ নতুন কমিটি থেকে ছিটকে পড়লেন সরোয়ার। এব্যাপারে মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মীর জাহিদ বলেন, মজিবর রহমান সরোয়ার আমাদের সকলের নেতা, তাকে সামনে রেখে কিছু বাজে লোকজন দলকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আর এহেন অপচেষ্টাকারীরা দলীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ না করে দলের বিরদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। মীর জাহিদ আরো বলেন, গত বছরের ১৮ই ডিসেম্বরে বিএনপি’র দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী’র নিকট জমা দেওয়া ৪২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে দলীয় কর্মকান্ড গতিশীল করতে আমরা বর্তমান কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য আলতাফ মাহমুদ সিকদার, কে এম শহিদুল্লাহ, হাবিবুর রহমান টিপু, সাইফুল আহসান আজিম, হারুন অর রশিদ সহ সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলরবৃন্দ ও আরো তিনজন মহিলা কাউন্সিলর রয়েছে যারা বিগত কমিটিতে থেকেও অবমূল্যায়িত ছিলেন। অপরদিকে, বরিশাল জেলা ও নগর কমিটিকে নিয়ে সরোয়ারের বিদ্রুপ ও সমালোচনা সরোয়ারকে মাইনাস করে ঘোষিত এ কমিটির ব্যাপারে সরোয়ার বলেছিলেন, সম্মেলন না হলে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় না। হয়তো সম্মেলন হলেই আরো ভালো নেতৃত্ব বেরিয়ে আসতো। এরপরে তিনি বর্তমান কমিটিকে সালা দুলাভাইয়’র কমিটি বলে আখ্যায়িত করেও মিডিয়ায় বক্তব্য দেন। দীর্ঘদিনের নিস্ক্রিয় লোকদের দিয়ে যদি সক্রিয় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় তা কখনো হয়না। আপনারাই জানেন যে এই বর্তমান কমিটির জাহিদ, ফারুক, মাকসুদ, শহিদুল্লাহসহ এরা বিগত বছরগুলোতে আন্দোলন সংগ্রামে কিরুপ উপস্থিতি ছিলো। অনেকদিন থেকেই তারা নিস্ক্রিয় ছিলো আর মোদ্দা কথা হলো এই কমিটিতে সমন্বয়ের একটা বড় ঘাটতি রয়েছে। জনভিত্তি রয়েছে এমন নেতাকর্মীদেরকে দিয়ে নেতৃত্ব তৈরী করা উচিত। এদিকে, নগরীতে সরোয়ার বিরোধী বলয় তৈরীর কারন হলো নিজের অবস্থান অটুট রাখতে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নানাভাবে কোনঠাসা করা, অযোগ্যদের পদ-পদবী দেয়া, একক আধিপত্য বিস্তার, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে নামকাওয়াস্ত ভুমিকা রেখে আ’লীগের মেয়র প্রার্থীকে জয়ী হতে গোপন আতাতের বিষয়টিও নেতাকর্মীদের মাঝে চাউর হয়েছে। এব্যাপারে একাধিক সূত্র বলেন, বরিশাল সদর বরাবরই বিএনপির ঘাটি এবং বিএনপির মেয়র প্রার্থীই বেশিরভাগ সময় জয়ী হয়েছে। কিন্তু এতো অর্জন থাকার পরেও নগর বিএনপির তৎকালীন এ কান্ডারীর ভুমিকা ছিলো রহস্যজনক। ভোট কেন্দ্রগুলোতে বিএনপির এজেন্ট বের করে দেয়াসহ মাঠ পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের কাজ করতে নাদেওয়াসহ নানাবিধ দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরোয়ারের তেমন কোন ভুমিকা দেখা যায়নি বরং ২/১ বার কথামালাতেই এদ্বায়িত্ব শেষ করেছেন তিনি। উল্লেখ্য সরোয়ার-এর উত্থান যেভাবে জিয়াউর রহমান-এর শাসনামলে শ্রমিক রাজনীতি দিয়ে বিএনপিতে সম্পৃক্ত হন সরোয়ার। এরশাদের আমলের বেশির ভাগ সময় হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় কারাগারে ছিলেন তিনি। সেসময় শ্রমিক দলের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে প্রথমবার বরিশাল-৩ আসন থেকে বিএনপি’র মনোনয়ন পান তিনি। কিন্তু ভোটের আগে তাঁকে সরিয়ে ওই আসনে মোশারফ হোসেন মঙ্গুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে কয়েক মাস পরই ভাগ্য খুলে যায় সরোয়ার এর। সদর আসনের সাংসদ আবদুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর উপনির্বাচনে ওই আসনের সাংসদ হন সরোয়ার। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সরোয়ার এর বদলে বিএনপি’র মনোনয়ন পান আবদুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে নাসিম বিশ্বাস। বছর দুয়েক পর নাসিম এর মৃত্যুতে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পান সরোয়ার। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সাংসদের পাশাপাশি হুইপ ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রিত্ব পান। পরবর্তী সময়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে তিনি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব।