জবরদখলে বিশ একর সম্পত্তি, শীঘ্রই অভিযান

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:৫৪, মার্চ ১৬ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের ঐতিহ্যবাহী কীর্তনখোলা নদী নির্ভর করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সাথে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। বরিশালের ইতিহাস-ঐতিহ্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ সবকিছুই জড়িয়ে রয়েছে এই কীর্তনখোলাকে ঘিরে। কিন্তু দিন দিন দখলের কবলে হারিয়ে যেতে বসেছে এর অস্তিত্ব। তবে পুরনো সেই একই কথা শোনালেন বিআইডব্লিউটিএর কর্তৃপক্ষ। জানালেন শীঘ্রই দখলমুক্ত করার কথা। উদ্ধার করা হবে বিআইডব্লিউটিএর দখল হয়ে যাওয়া প্রায় বিশ একর সম্পত্তি। শুধু তাই নয়, প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ কীতর্নখোলা নদীতে চার সহশ্রাধিক কাচা-পাকা স্থাপনা উচ্ছেদের আওতায় রয়েছে বলেও জানান। এনিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ বলেন, ১৯৬০ সালে নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার জন্য কীর্তনখোলা নদী তীরের ৩৬ দশমিক ৮০ একর জমি বিআডব্লিউটিএ অধিগ্রহণ করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব না হওয়ায় অধিকাংশ সম্পত্তি নামে-বেনামে দখল হয়ে যায়। নৌবন্দরের উত্তর দিকে জেল খালসহ রসুলপুর এলাকায় ২৮ একরের মধ্যে ২০ একর বেদখল আছে। ইতিমধ্যে কীর্তনখোলা নদীর তীর দখলমুক্ত করার জন্য ঢাকায় প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেওয়ার পর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা বলেন, মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক মানের পোর্ট গড়ে তুলতে বিভিন্নধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ। যেকারণে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়েছে। ইতিমধ্যে কীর্ত্তণখোলা তীরবর্তী একটি আধুনিক পাইলট বিশ্রামাগার নির্মিত হয়েছে। পাশাপাশি ছোট-বড় জাহাজের বিভিন্নধরণের পল্টুনও বাড়ানো হবে। অপরদিকে, নগরীর নৌ বন্দরের ভুসম্পত্তি উদ্ধারের কমিটিতে রয়েছে এসিল্যান্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ দপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, জোনাল সেটেলমেন্ট, জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ। দখল হওয়া সম্পত্তিতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরণের স্থাপনা। এরমধ্যে রয়েছে কোম্পানি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভবন এবং আধা-কাচা ঘর ও দোকানপাট। নৌবন্দর সুত্রে জানা গেছে, নদীর পানির লেভেল থেকে ১শ ৫০ ফিট জায়গার ৫০ ফিটের মধ্যে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মান করা যাবেনা। বাকি ১শ ফিটের মধ্যে যদি মালিকানা সম্পত্তি থাকে তাহলে স্থাপনা নির্মানের ক্ষেত্রে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে বিআইডব্লিউটিএ থেকে। অন্যথায় তা অবৈধ হবে। কারণ পোর্ট এলাকায় জাহাজগুলোর নির্বিঘ্ন আসা-যাওয়া ও বন্দর ট্রাফিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পোর্ট সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে এই নিয়ম বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এদিকে, বরিশাল নৌবন্দরের সম্পত্তি দখলমুক্ত করার ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো: জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, কমিটি গঠিত হয়েছে বিষয়টিতে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাওয়া হবে। সরেজমিন সুত্রে, বরিশাল নৌবন্দরের উত্তরে আমানতগঞ্জ খাল থেকে দক্ষিণের রূপাতলী সিএসডি গোডাউনের খালের দক্ষিণ পাড় পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫শ ৭০ কিলোমিটার কীর্তনখোলার তীর বিআইডব্লিউটিএ’র এবং এর বাকি অংশ জেলা প্রশাসনের। তবে বন্দর-সংলগ্ন নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তীরে উচ্চ জলরেখা থেকে তীরের দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত উভয় তীরে ৩৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ফোরশোর রয়েছে, যার অর্ধেকই দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নদী সুরক্ষা আইনানুযায়ী নদীর দুই তীরের যে অংশ শুষ্ক মৌসুমে চর পড়ে এবং বর্ষা মৌসুমে ডুবে যায়, তাহলো ফোরশোর। ওই ফোরশোর এলাকায় কারো অধিকার থাকে না এবং কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্টান ওই জমি দখল করলে দখলদার হিসেবে চিহ্নিত হবেন। অথচ বাস্তব চালচিত্র হলো, কীর্তনখোলা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে ওঠা রসুলপুর চর, মোহাম্মদপুর চর, দপদপিয়ার চর, কর্ণকাঠী চর, পলাশপুর চর, খোন্নারের চর এবং চর বাড়িয়ার চর এবং দপদপিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকা দখল করেছে প্রভাবশালীরা। বর্তমানে যে যার মতো করে এই নদী ব্যবহার করছেন। উন্মুক্ত এ নদীর পশ্চিম ও পূর্ব দুই তীরে এখন গড়ে উঠেছে বহু অবৈধ স্থাপনা। আবার কেউ নদীর তীর দখল করে গড়ে তুলছেন ইট, বালু, পাথর ও কয়লা বিক্রির ডিপো ও লঞ্চ তৈরির ডকইয়ার্ড। এনিয়ে নাগরিক পরিষদ বরিশাল জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, এটা নিয়ে কি আর, বলবো বলতে বলতে তো জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে গেছি, এরপরেও তো দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বরং দিনদিন দখলদারিত্ব বাড়ছে। আর দখলদারদের মধ্যে কোন ভয়ভীতিও নেই। দিবালোকেই কীর্তনখোলা নদী যে যেভাবে পারছে দখল করছে। অপরদিকে, নদী খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির বরিশাল জেলার সভাপতি কাজি এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, মিটিং মিছিল মানববন্দন স্মারকলিপিপেশসহ হেন কর্মসূচী নেই যা পালন করিনি। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলো দখলদার বেড়েছে বটে কমেনি; আর উচ্ছেদও হয়নি।