মাছ ধরা বন্ধ ১৪ দিনেও চাল পায়নি লালমোহনের জেলেরা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৪৯, মার্চ ১৪ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ ভোলার লালমোহন উপজেলার পাঙ্গাশিয়া গ্রামের জেলে মনির হোসেন। তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করে সংসার চলতো তার। কিন্তু মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় গত ১৪ দিন ধরে মাছ শিকারে যাচ্ছেন না তিনি। তাই বেকার সময় পার করছেন। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন। মনির জানান, আগে মাছ ধরতাম, প্রতিদিন আয় রোজগার ছিল, এখন মাছ ধরা বন্ধ তাই কামাই নাই। আমাদের চাল দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেই চাল পাইনি। কবে চাল পাবো তাও জানি না। একই অবস্থা আব্দুল মালেকের। মাছ শিকার করতে না পেরে তিনিও বেকার সময় পার করছেন। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তার। তিনি জানালেন, বেকার জেলেদের কষ্টের যেন শেষ নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে। জেলে পুনর্বাসনের চাল এখনো পাননি তিনি। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় মনির ও মালেকের মত যেন একই অবস্থা লালমোহনের নিবন্ধিত ২৩ হাজার জেলের। একদিকে মাছ ধরা বন্ধ অন্যদিকে চাল বিতরণে দেরি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মেঘনা-তেঁতুলিয়ার জেলেরা। ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত চাল এখনো পৌঁছায়নি। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। জেলেরা জানালেন, মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সব জেলেই বেকার। বিকল্প কর্মসংস্থানেও যেতে পারছেন না তারা। জেলেরা মনে করছিলেন, দুই মাসের চাল পেলে হয়ত কিছুটা হলেও তাদের সংকট দূর হবে। কিন্তু একদিকে আয়-রোজগার বন্ধ অন্যদিকে ঋণের আর দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন তারা। ধার-দেনা করে চলতে গিয়ে তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। অন্যদিকে পেটের টানে কেউ কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকারে গেলে তাদের জেল-জরিমানা গুনতে হচ্ছে। লালমোহনের গজারিয়া খাল গোড়া মৎস্য ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, নৌকা ঘাটে নোঙর দেওয়া। ঘাটের পাশেই অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। কেউ জাল বুনছেন আবার কেউবা নৌকা-ট্রলার মেরামত করছেন। ওই ঘাটে গিয়ে কথা হয় জেলে মোকশেদ ও ইয়াছিনের সঙ্গে। তারা জানালেন, মাছ ধরা বন্ধ, আমরা এখন বেকার। উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কিভাবে সংসার চালাবো সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এনজিওর কিস্তির টাকাও দিতে পারছি না। দুই মাসের জন্য কিস্তি আদায় বন্ধ হলে অনেকেই জন্য ভালো হতো। জেলেরা বলেন, আমরা নদীর কাজ জানি, অন্য কাজ জানি না। তাই কেউ আমাদের অন্য কাজে নিতেও চায় না। ক্ষেত খামারেও কাজ পাচ্ছি না। গজারিয়া খাল গোড়া মৎস্য ঘাটের আড়ৎদার খোকন মাতাব্বর জানান, এ ঘাটে এক হাজারের বেশি জেলে রয়েছে। তাদের সবাই দেনার দায়ে জর্জরিত। তাদের মত আড়ৎদারদেরও ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। তারাও সংকটে আছেন। বলা যায় মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত সব মৎস্যজীবী কষ্টে আছেন। আমাদের দাবি জেলেদের জন্য যে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা যেন প্রকৃত জেলেরা পায়। উপজেলার বাত্তির খাল ও মঙ্গল সিকদারসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গিয়ে দেখা গাছে একই চিত্র। অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তায় মধ্যে রয়েছেন হাজার হাজার জেলে। জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুছ জানান, লালমোহন উপজেলার নিবন্ধিত ২৩ হাজার জেলের মধ্যে ১১ হাজার জেলের জন্য ৮০ কেজি করে চাল এসেছে। আমরা সেই চাল বিতরণের জন্য ইউনিয়নগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছি, শিগগিরই তাদের চাল বিতরণের জন্য বলা হয়েছে। এদিকে লালমোহনে অর্ধলক্ষাধিক জেলে থাকলেও নিবন্ধনের আওতায় এসেছে ২৩ হাজার জেলে। এদের মধ্যে বরাদ্দ এসেছে মাত্র ১১ হাজার জেলের। এতে প্রায় ১২ হাজার জেলে চাল থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশের অভয়াশ্রম থাকায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।