সহকারী শিক্ষককে পেটালেন প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:৪৩, মার্চ ০৮ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ ও টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ না করায় এক সহকারী শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে। মারধরের শিকার শিক্ষকের নাম রনজিৎ কুমার বাড়ৈ। তিনি ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমির (মাধ্যমিক বিদ্যালয়) সহকারী শিক্ষক। অভিযুক্তের নাম সাজেদা বেগম। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমির একাধিক শিক্ষকের ভাষ্যমতে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুল হক চোখে দেখেন না। তাই বিদ্যালয়ে তাকে আনা-নেওয়া করেন তার স্ত্রী সাজেদা বেগম। আজ ক্লাস শুরুর আগে তাকে বিদ্যালয় নিয়ে আসেন। এরপর তিনি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক রনজিৎ কুমার বাড়ৈর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বেলা ১১টার দিকে রনজিৎ কুমার বাড়ৈকে সামনে পেয়ে ধারের টাকা পরিশোধের জন্য অনুরোধ করেন। রনজিৎ কুমার টাকা দিতে দেরি হবে বলে জানান এবং সাজেদা বেগমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এতে সাজেদা বেগম একটি রড দিয়ে রনজিৎ কুমাকে কয়েকটি আঘাত করেন। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুল হক  বলেন, তিনি চোখে দেখেন না। কিডনি, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্ত চাপসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। ২০১৯ সালে ডান চোখের ছানি অস্ত্রাপচার হয়। অস্ত্রোপচার সঠিকভাবে না করায় ডান চোখের দৃষ্টি হারান। এরপর বাম চোখে ঝাপসা দেখছিলেন। এরপর বেশ কিছুদিন হলো তিনি বাম চোখের দৃষ্টি হারান। দৃষ্টি না থাকা ও নানা জটিল রোগের কারণে তিনি বিদ্যালয়ের চাকরি ছাড়তে চেয়েছিলেন। তবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অনুরোধে তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ‘বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদটিও শূন্য। এ কারণে বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়সহ সব হিসাব রাখেন সহকারী শিক্ষক রনজিৎ কুমার। তিনি শুধু সই করেন। ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ফি বকেয়া পড়ে। এ কারণে কেন্দ্রসচিব তার কাছে বার বার ফির ৩৫ হাজার টাকা চাচ্ছিলেন। তিনি কেন্দ্র সচিবকে বলেন, রনজিৎ কুমার কাছে সেই টাকা জমা আছে। এরপর রনজিৎ কুমারের কাছে কেন্দ্র ফি জমা না দেওয়ার কারণ জানতে চান। রনজিৎ কুমার তাকে বলেন, ওই টাকা অন্য খাতে ব্যয় হয়েছে।’ প্রধান শিক্ষক মিজানুল হক আরও বলেন, তিনি আয়-ব্যয়ের ভাউচার চান। রনজিৎ কুমার বলেন, আপনি ২০ হাজার টাকা দেন। বাকিটা রনজিৎ কুমার ম্যানেজ করে দেবেন। তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে রনজিৎ কুমার তাকে সুদে বা ধার করে টাকা এনে দিতে বলেন। বছরখানেক আগে মিজানুল হকের ভাতিজির কাছ থেকে রনজিৎ কুমারের ভাইয়ের স্ত্রী ২০ হাজার টাকা ধার নেন। তিনি সেই টাকা পরিশোধ করেন। তবে ভাতিজি ঢাকা থাকায় সেই টাকা দিয়েছিলেন সাজেদা বেগমের হাতে। রনজিৎ কুমার সেটা জানতে পেরে দুই মাসের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে তার কাছে ২০ হাজার টাকা ধার চান। একপর্যায়ে রনজিৎ কুমারের বিপদ দেখে তিনি টাকা ধার দেন। কিন্তু এরপর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও সেই ধারের টাকা পরিশোধ করেননি। এদিকে ভাতিজি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন প্রধান শিক্ষক মিজানুল হককে। টাকার জন্য তার স্ত্রী সাজেদা বেশ কয়েকবার রনজিৎ কুমারের বাড়ি গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেছেন। বিভিন্ন সময় ফোন করেছেন। বিদ্যালয় গিয়ে টাকা চেয়েছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। রনজিৎ কুমার ধারের টাকা দেওয়ার কথা বলে তাকে ঘুরাচ্ছিলেন। হয়রানি করছিলেন। আজ বিদ্যালয়ে তাকে সামনে পেয়ে ফের টাকা চান স্ত্রী সাজেদা বেগম। এসময় নানা কথা বলতে থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আশপাশে থাকা একটি রড দিয়ে রনজিৎ কুমারকে আঘাত করেন সাজেদা বেগম। এ বিষয়ে সাজেদা বেগম  বলেন, ‘কয়েক দফা টাকা দেওয়ার তারিখ দিয়েও আজ পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করেনি রনজিৎ কুমার। উল্টো তিনি আমার স্বামীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। এ কারণে আমি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম।’ অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক রনজিৎ কুমার বাড়ৈ বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুল হকের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম। তবে বিভিন্ন সমস্যার কারণে তার টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে পারিনি।’ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সরদার বলেন, বিষয়টি কয়েকজন শিক্ষক তাকে জানিয়েছেন। বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি শিক্ষকদের নিয়ে জরুরি সভা করে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে কোনো পক্ষ বা বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক এ ঘটনায় অভিযোগ দেননি। তারপরও বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’ এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম বলেন, ‘টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে বিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। এ ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলা হয়েছে।’