বেকারত্বের কারণে শরীরের অঙ্গ বিক্রির বিজ্ঞাপন: অভাব না কী ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:৫৪, ফেব্রুয়ারি ২৩ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥  বরিশাল নগরীজুড়ে নিজের শরীরে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে পরিবারের দায়ভার নেওয়ার পোস্টার লাগাচ্ছেন সাইফুল ইসলাম নামের ২৩ বছরের এক যুবক। বেশ কয়েকদিন ধরেই নগরীর আমতলার মোড়, শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজের মধ্যে, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কেই এমন পোস্টার লাগিয়েছেন তিনি। দেয়ালে দেয়ালে সাইফুলের লাগানো পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘বেকারত্বের কারণে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে ফেমিলির দায়ভার কিছুটা মেটাতে চাই। যোগাযোগ: সাইফুল ইসলাম। বি:দ্র: কেউ অযথা বিরক্ত দিবেন না। যে কোনো একটা জব পেলে এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিতাম না’। এদিকে ভাইরাল হতে বা জনসাধারণের মনে দয়ার সৃষ্টি করে সুবিধা আদায় করতে এ বিজ্ঞাপন দিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী। সাইফুল ইসলামের বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের দেশান্তরকাঠি গ্রামে। তার পিতার নাম মোজাহার খান। সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালে বেতাগী থেকে দাখিল, ২০১৫ সালে চরমোনাই মাদরাসা থেকে আলিম এবং একই মাদরাসা থেকে ২০১৯ সালে ফাজিল পাস করি। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো চাকরি পাইনি। শেষে বরিশালে দিনমজুরের কাজ করেছিলাম ৭ মাস। সাইফুল বলেন, আলিম পর্যন্ত পরিবার পড়িয়েছে। তারপর আমার নিজের চেষ্টায় ফাজিল পাস করেছি। আমাদের পরিবারে আমার বাবা, মা, তিন ভাই, বোন ও আমার স্ত্রী রয়েছে। বোনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে, তিন ভাই তাদের সংসার নিয়েই থাকে। বাবা ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকরি করতো, পরে বেতাগীতে কৃষি কাজ করতো। এর মধ্যে সে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার দেনায় পড়ে যান। এখন বাবার চিকিৎসার টাকাও জোগাড় করতে পারছি না। একবার আমি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলাম। সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষিত হয়ে কাজ করতে পারছি না। আমি আমতলার মোড় এখন এক বন্ধুর বাসায় থাকছি। চাকরির জন্য অনেক জায়গায় গিয়েছি, কিন্তু চাকরি পাচ্ছি না। আর এসব আমি ভাইরাল হওয়ার জন্য করছি না। আমার একটা চাকরি হলে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতাম না। পথচারী সেলিম হাওলাদার জানান, কয়েক মাস আগে ‘ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন বগুড়ার বাসিন্দা আলমগীর কবির। পরে অনুসন্ধানে ভিন্ন চিত্র বের হয়ে এসেছিল। বরিশালে সাইফুল ভাইরাল হতে বা সুবিধা নিতে অঙ্গ বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বেকারত্বের হার দিন দিন বাড়ছে। যে ছেলেটি শরীরের অঙ্গ বিক্রির পোস্টার লাগাচ্ছে, সেটার যদি খোঁজ নিয়ে সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তার জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করা উচিৎ বরিশালের বড় বড় শিল্পপতিদের।’