চাঁদাবাজি মুক্ত নতুন নেতৃত্বের হাতে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল
দেশ জনপদ ডেস্ক|১৯:৫৪, ফেব্রুয়ারি ২০ ২০২২ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজিসহ সকল ধরনের অনিয়ম বন্ধ হতে শুরু হয়েছে। সভাপতি গোলাম মাশরেক বাবুল এবং সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে দায়িত্বগ্রহণের পরপরই নথুল্লাবাদে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। এতদিন এই টার্মিনালে বাস মালিকদের কার্যকরী কোনো কমিটি না থাকায় যে যার মত করে চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছিলেন। বিশেষ করে শ্রমিক নেতা কামাল হোসেন লিটন মোল্লা একক প্রভাব বিস্তার করেন। তার বিরুদ্ধে আছে, পরিবহন থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ শ্রমিকদের মারধরের গুরুতর অভিযোগ।
এতদিন ধারণা করা হচ্ছিল, সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্ষমতাসীন দলীয় এই লিটন মোল্লার হাতেই যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় এ বাস মালিক সংগঠনের নেতৃত্ব। এনিয়ে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোস কাজ করলেও ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখায়নি। তবে গত বছরের শুরুতে একটি পরিবহনের কাউন্টারে হামলা-ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগে লিটন মোল্লা কারাগারে গেলে তার প্রভাব কিছুটা হ্রাস পেতে থাকে। অবশ্য এরপরেও অনেকটা তার নিয়ন্ত্রণেই ছিল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। দীর্ঘদিনের এই সব কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ এবং বাস্তবতা উপলব্ধি করে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়বাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত টার্মিনালের দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে।
জানা যায়, সিটি মেয়রের হস্তক্ষেপে গোলাম মাশরেক বাবুলকে সভাপতি এবং কিশোর কুমার দেকে সাধারণ সম্পাদক করে গত সপ্তাহে নতুন একটি কমিটি ঘোষণা হয়। এই কমিটির কার্যকরী পরিষদে লিটন মোল্লাতো দূরের কথা বিতর্কিত অনেককেই রাখা হয়নি। এমনকি পূর্বের কমিটির সভাপতি আফতাব হোসেনও ঠাঁই পাননি।
টার্মিনালের সূত্র জানায়, নয়া এই কমিটি দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পরপরই টার্মিনালে অনিয়ম রোধে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়। এবং পরিবহনগুলোতে চাঁদাবাজি বন্ধ করে দিয়ে একটি সু-শৃঙ্খল পরিবেশ তৈরিতে ইতিমধ্যে অনেকাংশে সক্ষম। পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা নয়া এই কমিটি এবং তাদের ইতিবাচক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। বিশেষ করে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র প্রতি।
বরিশাল টু ঢাকা রুটে চলাচলরত একাধিক বাস শ্রমিক ও কাউন্টার ম্যানেজারদের কথা জানা গেছে নতুন এই কমিটির সিদ্ধান্তে তারাও স্বস্তিতে রয়েছেন। এতদিন চাঁদা দেওয়ার পরে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল, কিন্তু সেটি অনেকটা দূর হয়েছে বেশকিছু পদক্ষেপে।
শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, টার্মিনাল লিটন মোল্লার নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে তারা সর্বদা আতঙ্কগ্রস্ত থাকতে হতো। কখনও কখনও ঠুকনো অজুহাতে তাদের ওপর চড়াও হতেন তিনি। এমনি মারধরও করা হতে শ্রমিকদের। তার হাতে মালিকদের কেউ কেউ বেইজ্জতিও হয়েছে। তার লোকজনের দাপটে নিরিহ মালিক শ্রমিকেরা ছিল তটস্থ। কিন্তু কেউ ভয়ে মুখ খুলতেন না।
নথুল্লাবাদে পরিবহনে আর কোনো চাঁদাবাজি বা অনিয়ম হোক এই ধরনের কিছু প্রশ্রয় দেওয়া হবে না সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নয়া কমিটি সভাপতি গোলাম মাশরেক বাবুল। তার ভাষায়, নতুন এই কমিটি যে সকল উদ্যোগ নেবে তা হবে মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থে, থাকবে না যাত্রী ভোগান্তিও। এক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার কোনো সুযোগও থাকছে না।
অনুরুপ মন্তব্য করেছেন এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে। তিনি সিটি মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন- বিগত দিনে নিজের চোখে চাঁদাবাজিসহ নানান অনিয়ম হতে দেখলেও প্রতিবাদ করতে পারেননি। কারণ অপকর্মে যারা জড়িত ছিল, তারা বিশেষ মহলের নাম ভাঙিয়ে চলতেন। নতুন এই কমিটি যা করবে তা মালিক, শ্রমিক এবং যাত্রীদের কল্যাণে।’