নগরীর বটতলা পুলিশ ফাঁড়ির পাশে দুর্ধর্ষ চুরি

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:৩০, ফেব্রুয়ারি ১৬ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর বটতলা পুলিশ ফাঁড়ির নাকের ডগায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্র“য়ারি) রাত ২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত আমিরকুটির এলাকার গলির মুখে “জুবায়ের স্টোর” মুদির দোকানে এই চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মুদি দোকানের মালিক কালাম শেখ গতকাল কোতয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাত ৩/৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানান, চোরেরা তার দোকানের তালা ভেঙ্গে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। রবিবার রাত ১২টার দিকে দোকান বন্ধ করে তিনি বাসায় যান। যাবার সময় প্রতিদিনের মতো দোকানের বাইরে দুটি তালা লাগান। সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় দোকান খোলেননি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে দোকান এসে দেখেন, সাঁটারে কোনো তালা নেই। বিষয়টি সন্দেহ হলে পার্শ্ববর্তী দোকানীদের নিয়ে দোকানের ভিতর প্রবেশ করেন। এসময় দোকানের বিভিন্ন মালামাল সহ ক্যাশ বাক্সে কোন টাকা দেখতে না পেয়ে চুরির বিষয়টি বুঝতে পারেন তিনি। এদিকে বটতলা পুলিশ ফাঁড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে প্রধান সড়কের পাশে এমন দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা এলাকাবাসীকে হতবাক করেছে। পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা। এলাকাবাসী জানান, প্রায় ২ ঘন্টা ধরে অজ্ঞাত ৩ জন ব্যক্তি দোকানের তালা ভেঙ্গে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। পরবর্তীতে চুরির ঘটনাটি দোকানের পাশের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ভিডিওটি তে দীর্ঘ সময় ধরে চুরি করতে দেখা গেলেও ওই সময়ে ফাঁড়ির কোন টহল পুলিশের দেখা মেলেনি। এর আগে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারী আমিরকুটির এলাকা থেকে একটি হলুদ অটোরিক্সা চুরি হয়। অটোর মালিক মোঃ শামিম জানান, রাত ৮টার দিকে আমিরকুটির কলাবাগান এলাকায় একটি চায়ের দোকানের এর সামনে অটোরিক্সাটি রেখে তিনি বাসায় যান। আধা ঘন্টা পরে এসে অটোরিক্সাটি আর দেখতে পাননি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজির পর না পেয়ে থানায় একটি জিডি করেন। তবে হতদরিদ্র শামিমের অটোর খোঁজ এখনো মেলেনি।গত কয়েক দিন আগে পরেশ সাগর মাঠের মুখে বুলেটের দোকানেও চুরি হয়। গত মাসে আমিরকুটির মাদ্রাসার এক ছাত্রের সাইকেলও চুরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা বাড়ায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। ওই এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় গত কয়েক মাসে একাধিক চুরি হয়েছে। কিন্তু কোন চোর ধরা পড়ছে না। তাছাড়া প্রশাসনের জোড়ালো নজরদারির অভাবে প্রতিদিন চুরির ঘটনা বেড়েই চলছে। এ বিষয়ে ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত হোসেন খান লাবু জানান, চুরি হলে পুলিশ দেখবে। এলাকায় চুরি হলে আমাকে জানালে আমি ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এ বিষয়ে বটতলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই অলিপ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে যাই। আসামীদের ধরার জন্য চেষ্টা চালাই। তবে আসামীদের এখনো পাওয়া যাই নাই। এ বিষয়ে বটতলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই দুলাল বলেন, চুরির বিষয়ে গতকাল আমাদের কাছে একটা অভিযোগ এসেছে। বাদীর কাছ থেকে সিসি টিভির ফুটেজে চুরির ঘাটনাটি দেখেছি। ফুটেজ দেখে চোরদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত আছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ফাঁড়ির এলাকা বড় কিন্তু সেই তুলনায় পুলিশ সদস্য কম। তাই সবসময় টহল দেয়া সম্ভব হয় না। এছাড়াও ওই এলাকায় আমাদের অনেক উপরস্থ কর্মকর্তারা বসবাস করেন বলে তিনি জানান। এদিকে আমিরকুটির এলাকায় সহকারি পুলিশ কমিশনার, বিএম কলেজের প্রভাষক, পত্রিকার সম্পাদক, শেরে-ই-বাংলার চিকিৎসক, আভাস এর পরিচালক ও বিএমপি’র অনেক কর্মকর্তা সহ সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তির বসবাস থাকলেও একের পর এক চুরির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারন মানুষ। এমনকি এলাকায় রয়েছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর কার্যালয়। ওই এলাকায় বসবাসরত দৈনিক দেশ জনপদ পত্রিকার সম্পাদক মির্জা রিমন বলেন, এলাকার কাছেই পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থান এরপরও এ ধরনের দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আশঙ্কাজনক ভাবে চুরির ঘটনা বেড়েই চলছে এলাকাটিতে। তবে নিরাপত্তায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের নজরদারির অভাব রয়েছে। আমিরকুটির এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার সহ পুলিশি টহল বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপদ ব্যবসার স্বার্থে দ্রুত প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে বিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিন) আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, যে কোন অপরাধ হলে পুলিশ তা তদন্ত করে দোষীদের আটক করবে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।