অন্যের প্রেমিকার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হওয়ায় খুন হন শাহাদত!

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:০১, ফেব্রুয়ারি ১৬ ২০২২ মিনিট

রিপোর্ট দেশজনপদ॥ কারখানায় কাজ করে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিলেন শাহাদত হোসেন নামে এক যুবক। কিছু টাকাও জমিয়েছিলেন। গুছিয়ে নিয়েছিলেন পরিবার। পারিবারিকভাবে স্থানীয় এক তরুণীর সঙ্গে ঠিক হয়েছিল তাঁর বিয়ে। কিন্তু সেই তরুণীর সঙ্গে এলাকার সম্পর্ক ছিল অন্য এক যুবকের, তাতেই প্রাণ গেলো শাহাদতের। খুন হতে হয় তাকে। নিহত শাহাদতের গ্রামের বাড়ি সাভারের ধামরাইয়ের মাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল। এমন রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডে ঘটনায় জড়িত থাকায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৪। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার ধামরাই ও আশুলিয়া থানার আমরাইল এলাকা থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, হত্যার পরিকল্পনাকারী মো. জাহিদুল ইসলাম ওরেফ জাহিদ (২২), আবু তাহের (২৪) ও সবুজ হোসেন (২৮)। আজ বুধবার রাজধানীর কাওরানবাজার নিজেদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১ আগস্ট ঢাকার ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের শাহাদাত কালিয়াকৈরে নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার পর গত ৪ আগস্ট থেকে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও বন্ধ থাকায় গত ৮ আগস্ট কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার। ওই বছরের ১২ আগস্ট ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের একটি কাঠ বাগান থেকে নিখোঁজ শাহাদাতের অর্ধগলিত ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ধামরাই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। এছাড়া গত ১২ আগস্ট ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায় ঘটনাটি আত্মহত্যা নয়, হত্যা। ভিকটিম শাহাদাতের মা ২৩ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে ধামরাই থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ধামরাই থানা পুলিশ গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিহত শাহাদাতের পরিচিত জাহিদকে গ্রেপ্তার করে। জাহিদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না দেওয়ায় রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মঈন বলেন, ভিকটিম শাহাদাত ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের কোহিনুর ইসলামের ছেলে। কালিয়াকৈর উপজেলার বারইপাড়ায় একটি প্রতিষ্ঠিত কারখানার কর্মচারী ছিলেন। গত ১৪ আগস্ট আসামি জাহিদের প্রেমিকার সঙ্গে শাহাদাতের বিবাহের দিন ঠিক করা ছিল। নিজের প্রেমিকার অন্য জায়গায় বিয়ের বিষয়টি মেনে নিতে না পারার জের ধরে সহযোগীদের নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে শাহাদাতকে হত্যা করেন জাহিদ। আসামিরা সবাই ধামরাই থানার আমরাইল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তাদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তারা একত্রিত হয়ে ভাড়া বাসা ও নিজ এলাকায় জুয়ার আসর বসাতো। র‌্যাব জানায়, ৩ আগস্ট শাহাদাতকে চন্দ্রা থেকে গাজীপুরের কাশিমপুরের কাছে মাটির মসজিদ এলাকায় ডেকে আনা হয়। সেখানে আসার পর আসামিরা তাকে ফুসলিয়ে আমরাইল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ফুসলিয়ে ২ দিন রাখা হয়। পরে ৬ আগস্ট সন্ধ্যার সময় সবাই একত্রে শাহাদাতকে নিয়ে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় আসেন। সেখান থেকে আশুলিয়ার একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। প্রথমে জাহিদ ভুক্তভোগীকে চর-থাপ্পড় এবং গোপনাঙ্গে ৪-৫টি লাথি মারেন। এসময় আসামিরা সঙ্গে থাকা লাঠি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে আসামিরা শাহাদাতের মরদেহ ভ্যানচালক সবুজের ভ্যানে করে ধামরাই থানার আমরাইল পুকুরিয়া সাকিনস্থ মনুমিয়ার কাঠবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের একটি ডালে কাঁচা পাট দিয়ে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। যাতে করে এটি একটি স্বাভাবিক আত্মহত্যা মনে করা হয়।