নেতৃত্ব ছাড়াই চলছে বরিশাল ছাত্রলীগ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:০০, জানুয়ারি ০৩ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১১ সালের জুলাই মাসে। এরপর মেয়াদ উত্তীর্ণভাবে প্রায় এগারটি বছর পার করেছে সংগঠন দুটি। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর ২০১৪ সালের জুন মাসে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ১০৯ সদস্য নিয়ে পূর্ণাঙ্গ করা হয়। তবে নানা চেষ্টার পরও পূর্ণাঙ্গ হয়নি মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। ইতিমধ্যে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নানা অপকর্মে যুক্ত হয়ে পড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বাকি নেতাদের অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই, কেউ চাকরিজীবী, কেউ ব্যবসায়ী। বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করেছেন এমন নেতার সংখ্যাও কম নয়। মাদকসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে বহিষ্কার হয়েছেন অনেক নেতা। অভিভাবক সংকটে মহানগর ছাত্রলীগ অনেকটাই ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে। নানা অপকর্মে চরম ইমেজ সংকটে পড়েছে মহানগর ছাত্রলীগ। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৫ মে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে সংগঠনটির শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকায় নেতৃত্ব নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে বর্তমানে পদ-প্রত্যাশী নেতা কর্মীরা। তবে মহানগর ছাত্রলীগে যাদের নেতৃত্বে আসার গুঞ্জন ছিল তাদের অধিকাংশই এখন বিবাহিত। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিবে কে? কিংবা কারা থাকবেন সংগঠনটির শীর্ষ পদগুলোতে। তবে কয়েকজন পদবিহীন নেতার নেতৃত্বে চলছে এখন ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটির বরিশাল মহানগর ও জেলা শাখা। এই দুই ইউনিট নিয়ে এখন বেশী তোড়জোড় চালাচ্ছেন বরিশাল ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। তবে বরিশালে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি না হওয়ার ব্যর্থতা স্বীকার করে অচিরেই কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। গত শুক্রবার ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রস্তুতিসভায় মেয়র সাদিক বলেন, ‘প্রতিবারই বলি, এই শেষ তোমাদের নেতৃত্ব। তারপরও তোমরা ধরে রাখছ অনেক দিন। আমার ব্যর্থতা যে ছাত্রলীগের কমিটি করতে পারিনি। এই দায় আমার ওপরই পড়ে।’ অবশ্য এ জন্য করোনা প্রাদুর্ভাবের কথা উল্লেখ করেন মেয়র। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম দেশজনপদকে বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগের জন্য কাজ করছি। আমাদের নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, যেটা ভালো মনে করেন সেটাই করবেন। মহানগর ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা অনিক (অনিক সেরনিয়াবাত) বলেন, জেলা ও মহানগর আ.লীগের নীতিনির্ধারকরা ছাত্রলীগের কমিটিতে কারা আসবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন। বিশেষ করে আমাদের নেতা বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ছাত্রলীগের নতুন কমিটির ব্যাপারে খুব শীঘ্রই সিদ্ধান্ত দিবেন। তবে বর্তমানে যারা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা অনেকেই বিবাহিত বলে স্বীকার করেন এবং আগামীতে নতুন কমিটিতে এদের স্থান হবে না বলেও মনে করেন তিনি। অপর এক ছাত্রলীগ নেতা রইজ আহম্মেদ মান্না বলেন, দীর্ঘদিন যারা রাজপথে থেকে দলের সকল কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নির্দেশনায় তাদের হাতেই দেয়া হবে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব। অপরদিকে হেমায়েত উদ্দিন সেরনিয়াবাত সুমনকে সভাপতি, আব্দুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক এবং শামসুদ্দোহা আবিদকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয় জেলা কমিটি। এর বছর তিনেক পরই ১০৯ সদস্য নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। তিনি বিয়েও করেছেন এবং বর্তমানে এক সন্তানের জনক। আর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বিয়ের কাজটা সেরেছেন অনেক আগেই। বর্তমানে তিনিও দুই সন্তানের জনক। সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুদ্দোহা আবিদ অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছাত্র রাজনীতি থেকে। এই কমিটির একাধিক নেতা বলেছেন, তারাও আর নেতৃত্বে থাকতে চান না। একজন মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে ঢুকেছেন, কয়েকজন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। নগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যখন ছাত্রলীগের কোনো নেতা অন্য সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে চলে যান বা সরকারি চাকরি করেন বা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন তাঁর পদটি থাকে না। ওই হিসেবে মহানগর ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাই আর পদে নেই। শীর্ষ পদের নেতারা নিস্ক্রিয় থাকলে পুরো সংগঠন ঝিমিয়ে পড়ে। এ জন্য সম্মেলনের মাধ্যমে দ্রুত নতুন কমিটি ঘোষণা করা প্রয়োজন বলে জানান তারা। এমন পরিস্থিতি নিয়ে আজ মঙ্গলবার নানা কর্মসূচিতে ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি নিয়েছি। নগর কমিটি বিলুপ্ত হলেও যৌথই কর্মসূচি হবে। কেন কেন্দ্র নগর কমিটি দিচ্ছে না জানা নেই। তবে জেলা কমিটির সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে চান। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাত বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে শীঘ্রই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। নেতৃত্বে কারা আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি। তবে নতুন নেতৃত্বের জন্য সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি।