বিসিসি মেয়রসহ আসামীদের বিরুদ্ধে সত্যতা পায়নি পুলিশ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:৫৬, জানুয়ারি ০৩ ২০২২ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাজনৈতিক ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনওর ওপর হামলাচেষ্টা এবং আনসার সদস্যদের ওপর হামলা ও গুলির মামলায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ কোনো আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ। তাই ওই মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে বরিশালের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন। তবে দাখিল করা প্রতিবেদন এখনো আদালত গ্রহণ করেননি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলার ধার্য তারিখ থাকায় সেদিন আদালত শুনানি শেষে প্রতিবেদন গ্রহণ করা বা না করার ওপর আদেশ দেবেন। এদিকে গত ৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও বিষয়টি জানাজানি হয়েছে গতকাল সোমবার (০৩ জানুয়ারি) সকালে। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ আগস্ট বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় স্বপনের সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ইউএনওর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে সেখানে উপস্থিত আনসার সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় হামলার চেষ্টা চালান। এ সময় আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়লে স্বপনসহ চারজন আহত হন। পরে ইউএনও কার্যালয়ের সামনে পুলিশ অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ফের ইউএনওর বাসভবনে হামলার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় ইউএনও মুনিবুর রহমান বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ ২৮ জনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয় ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করে কোতয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। জানা গেছে, এই মামলার তদন্তের ভার ছিল কোতয়ালি মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেনের ওপর। আনোয়ার বদলি হয়ে গেলে ১৯ নভেম্বর থেকে একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন তদন্ত শুরু করেন। দায়িত্ব গ্রহণের ১৭ দিনের মধ্যে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। তদন্তে ২৮ আসামির মধ্যে কারও বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাননি বলে উল্লেখ করেন তিনি। লোকমান হোসেন বলেন, ‘ইউএনও মহোদয়ের করা মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে যা পেয়েছি সেভাবেই প্রতিবেদন দিয়েছি। তিনি বলেন, যথেষ্ট সাক্ষী না থাকায় মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদন আদালত গ্রহণ না করলে পুনরায় তদন্ত হবে। দুই পাতার ওই প্রতিবেদনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ ২৮ অভিযুক্তকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি, তাই তাদের এই মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। যদি ভবিষ্যতে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ শনাক্ত হয়, তাহলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হবে।’ বরিশালের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ডিসেম্বর মাসে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। এই বিষয়ে জানতে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।’ এ ঘটনায় মেয়রকে প্রধান আসামি করে তৎকালীন ইউএনও মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। অপরদিকে ওই একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তৎকালীন ইউএনও মুনিবুর রহমান, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচনার সৃষ্টি হয়। ঘটনার তিন দিন পর বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে বিষয়টি সমঝোতা হলে উভয় পক্ষে উত্তাপ কমে।