অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ হাফসাদের

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:০১, ডিসেম্বর ২৬ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রায় সবার বাড়িই বরগুনা জেলায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছে এখানকার অনেক পরিবার। পিতৃমাতৃহীন এসব শিশুর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় স্বজনরা। বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের মানিকখালী গ্রামের হাফসার বিয়ের কথা ছিল আগামী শুক্রবার। বিয়ের দিন তারিখ পাকাপাকি হয়ে গেলে হাফসার বিয়ের কেনাকাটা করতে ছোট্ট শিশু নাসিরুল্লাহকে নিয়ে রাজধানী ঢাকায় গিয়েছিলেন হাফসার বাবা হাকিম শরিফ ও মা পাখি বেগম। ঢাকার একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন বাবা হাকিম শরিফ। মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যাংকে রাখা কিছু টাকা, শাড়ি আর গহনা কিনে তারা এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে বরগুনার উদ্দেশে রওনা হন। এর পর আর বাড়ি ফেরা হয়নি হাকিম শরিফ আর তার স্ত্রী পাখি বেগমের। বাড়ি ফেরেনি ছোট্ট শিশু নাসিরুল্লাহও। গভীর রাতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যু হয় তাদের। হাফসার মামা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আমার বোন-ভগ্নিপতি এবং ভাগ্নের মৃত্যু হয়েছে। তাই এখানে ওখানে পড়ে থাকা অঙ্গার হয়ে যাওয়া মরদেহগুলো আমরা দেখতে যাইনি। পরে কোথাও তাদের সন্ধান না পেয়ে আমরা বরগুনা ফিরে আসি। বরগুনা ফিরে জানতে পারি আড়াই বছরের এক শিশুসন্তানকে আঁকড়ে ধরে দগ্ধ একটি মৃতদেহ বরগুনায় দাফন করা হয়েছে। আমাদের ধারণা, ওই মরদেহটিই আমার বোন পাখি বেগমের। এবং তার কোলে থাকা শিশুটিই আমার আদরের ভাগ্নে নাসিরুল্লাহ। হাফসার নানী ফরিদা বেগম জানান, তার নাতনী হাফসার বিয়ের সব কিছু পাকাপাকি হয়ে গেছে। আগামী শুক্রবার তার বিয়ের তারিখ ঠিক করা ছিল। মেয়ের বিয়ের জন্যে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বিয়ের কেনাকাটা করে লঞ্চে উঠেছিল আমার মেয়ে ও মেয়ে জামাই। ফুটফুটে শিশু নাসিরুল্লাহও ছিল তাদের সঙ্গে। লঞ্চ দুর্ঘটায় এখন তাদের কেউই আর বেঁচে নেই। এদিকে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও হাকিম শরিফ, পাখি বেগম এবং তাদের ছেলে নাসিরুল্লাহর মরদেহের কোনো সন্ধান পাননি ফরিদা বেগম ও তার ছেলে নজরুল ইসলাম। তবে অগ্নিকাণ্ডের শিকার এমভি অভিযানে সন্ধান চালিয়ে হাফসার বিয়ের শাড়ি কাপড় গহনা আর পুড়ে যাওয়া লাগেজ ঠিকই খুঁজে পেয়েছেন হাফসার মামা নজরুল ও নানি ফরিদা বেগম। খুঁজে পেয়েছেন ছোট্ট শিশু নাসিরুল্লাহর প্যান্ট-শার্টও। এদিকে বাবা-মায়ের আকস্মিক মৃত্যুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বড় মেয়ে হাফসা, মেজ মেয়ে সুমাইয়া এবং সেজ ছেলে ফজলুল হকের ভবিষ্যৎ। আটকে গেছে পাকাপাকি হয়ে যাওয়া হাফসার বিয়েও। হাফসার নানি ফরিদা বেগম আরও জানান, হাফসারা মোট চার ভাইবোন। ছোট ছেলে আড়াই বছরের নাসিরুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে। বাড়িতে ছিল হাফসা (১৮), সুমাইয়া (১৪) ও ফজলুল হক (১০)। তারা সবাই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। ফরিদা বেগমের স্বামী মো. মজিবুর রহমান পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী রয়েছেন। অন্যদিকে পিতৃমাতৃহীন এই অসহায় নাতি-নাতনিদের লেখাপড়া আর ভরণপোষণের দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। এসব ভেবেই এখন দিশাহারা ফরিদা বেগম। সদর উপজেলার মানিকখালী গ্রামের শুধু হাফসা, সুমাইয়া আর ফজলুল হকই নয়, এমভি অভিযান-১০ ট্র্যাজেডিতে পিতৃমাতৃহীন হয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এখন বরগুনার আরও অনেক শিশুর। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় থমকে গেছে অনেকের জীবন, আটকে গেছে শত স্বপ্ন। এসব ভুক্তভোগী শিশুর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তায় পৃথক কোনো কর্মসূচি গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।