কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয় সম্ভব
রিপোর্ট দেশজনপদ॥ আমরা নিজের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কতটা সচেতন? বাইরে যা দেখাই, অন্তরেও কি আমরা তাই? কণ্ঠ বিশ্লেষণ প্রযুক্তির মাধ্যমে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি এমনকি রোগব্যধির লক্ষণও শনাক্ত করা সম্ভব।
কণ্ঠ পার্কিনসনের মতো রোগেরও সন্ধান দিতে পারে। অর্থাৎ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কণ্ঠস্বর থেকে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। জার্মানির আউগসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বিয়র্ন শুলার বলেন, ‘পার্কিনসন রোগ আসলে নিউরোজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে মোটোর স্কিলস বা শরীর নাড়াচাড়া করার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একেবারে প্রাথমিক স্তরেই সূক্ষ্ম পেশির ওপর প্রভাব পড়ে, যা আমাদের কণ্ঠে ধ্বনি সৃষ্টি করার সময় প্রয়োজন হয়।’
তখন সুস্থ মানুষের কণ্ঠের সঙ্গে একটা পার্থক্য সৃষ্টি হয়। অত্যন্ত অসুস্থ মানুষের কণ্ঠ ভাঙা শোনায়। গবেষকরা একেবারে প্রথম পর্যায়ে পার্কিনসন রোগ শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।
অটিজম, এডিএইচএস বা ডিপ্রেশনের মতো রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রেও কণ্ঠ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া কাজে লাগছে। এ প্রক্রিয়ার সাফল্যের হার ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ। সিস্টেমে এরই মধ্যে কয়েক'শো রোগীর তথ্য জমা হওয়ায় সেটা সম্ভব হচ্ছে।
মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি আগেই সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। তিনজন স্বেচ্ছাসেবীর সাহায্যে তা যাচাই করা হয়েছে। যেমন ডিয়র্ক নামের ব্যক্তির কৌতূহল ছাড়া তার আর কোনো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা গেছে কি না, তা জানার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রফেসর শুলার বলেন, ‘‘ডিয়র্কের মধ্যে হালকা অন্তর্মুখী প্রবণতা রয়েছে। অর্থাৎ সে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার বদলে নিজের মতো থাকতে পছন্দ করে।”
ডিয়র্ক নিজেও সেই মূল্যায়ন সম্পর্কে একমত। অর্থাৎ পূর্বাভাস আবার মিলে গেছে। তিনি বলেন, ‘‘যারা আমাকে ভালো করে চেনে না, তারা এমনটা ভাবতেই পারে না। তবে আমি সত্যি একা থাকতে ভালোবাসি।”
কাটারিনা নামের এক নারীর ক্ষেত্রেও কি সিস্টেম এমন নিখুঁত বিশ্লেষণ করেছে? তিনি নিজের বুটিকে অনেক কাজ করতে ভালোবাসেন। নিজের ক্যাফেতেও তাই। তার কণ্ঠ শুনলে প্রথমে বহির্মুখী মনে হবে। নিজের সম্পর্কে কাটারিনা বলেন, ‘‘আমি গ্রিসের মানুষ। পরিবারের লোকজন অথবা স্বামীর সঙ্গে কথা বলার সময় গলার স্বর চড়ে যায়। অনেকে ভাবে আমরা ঝগড়া করছি। আসলে সেটা ঠিক নয়।”
কম্পিউটারও তাকে ভুল বোঝে কি না, সে বিষয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু প্রফেসর বিয়র্ন শুলার তার কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করে বলেন, ‘‘ডিয়র্কের তুলনায় কাটারিনার ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা ভারসাম্য লক্ষ্য করছি। অর্থাৎ তার কণ্ঠ শুনে মনে না হলেও বাস্তবে খুব বড় ভারসাম্য রয়েছে।”
তাহলে তিনি বহির্মুখী নন! সত্যি কি সব ক্ষেত্রেই গড়পড়তা লক্ষ্য করা গেছে? কাটারিনা নিজে সেই মূল্যায়ন মেনে নিয়ে বলেন, তিনি নিজেকে সত্যি মধ্যপন্থি মনে করেন। অর্থাৎ কম্পিউটার ঠিকই ধরেছে। কাটারিনা প্রায়ই একা থাকতে ভালোবাসেন।
রবিন নামের ব্যক্তির ক্ষেত্রে কী জানা গেছে? তিনি আপাতত নেপাল ভ্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেখানে ট্রেকিং ট্যুর করতে চান। খেলাধুলা তার খুবই পছন্দ। সংকল্প অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পছন্দ করেন। নিজের সম্পর্কে রবিন বলেন, ‘‘যে কাজই করি না কেন, ভেবেচিন্তে করি এবং সব সময়ে নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে চাই। আমার অনেক বন্ধু ও পরিচিত আমাকে এভাবেই চেনেন।”
প্রো. শুলার মনে করেন, রবিনের কণ্ঠের মূল্যায়ন দেখলে বোঝা যাবে যে, তার বহির্মুখতা গড় মানুষের তুলনায় আলাদা। কণ্ঠ বিশ্লেষণের ফল অনুযায়ী তিনি বাস্তবে অন্তর্মুখী ও আত্মমূল্যায়ন করতে অভ্যস্ত। ব্যক্তিত্বের বাকি বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত সাধারণ। রবিন অবশ্য নিজের সম্পর্কে একেভাবে ভিন্ন ধারণা পোষণ করেন। রবিন নিজে মনে করেন, যে তিনি যথেষ্ট বিবেকবান, মিশুকে এবং স্থিতিশীল।
তাহলে কি সিস্টেম এবার ভুল করেছে? নাকি সেটি সত্যি আমাদের আরও ভালোভাবে চিনতে পারে? বর্তমানে পার্সোন্যালিটি টেস্টের সাফল্যের মাত্রা ৭০ শতাংশের কিছুটা বেশি। অর্থাৎ, এই প্রযুক্তি এখনো মানুষকে শতভাগ চেনার পর্যায়ে আসেনি।