রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদালতের দেওয়া রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাদের চাওয়া- আইনী প্রক্রিয়া মেনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রায় কার্যকর করা হোক।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে অভিযুক্ত ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেন, দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত বিচার আমরা পেয়েছি। আরও অল্প সময়ে হতো, যদি কোভিড-১৯ না আসতো। আমার মনে হয়, বিচার বিভাগ প্রজ্ঞা ও আইন অনুযায়ী সঠিকভাবেই বিচার করেছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আমরা সবাই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাচ্ছিলাম এবং সেটাই হয়েছে। আশা করবো এই রায় যেন স্বল্প সময়ে কার্যকর হয়।
বুয়েট উপাচার্য বলেন, ছাত্রছাত্রীদের মনে রাখতে হবে, যদি কেউ এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়, তবে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে। আবরার হত্যা মামলা পরিচালনার পরবর্তী কার্যক্রমেও বুয়েট কর্তৃপক্ষ সম্পৃক্ত থাকবে বলেও জানান উপাচার্য। এছাড়াও বর্তমানে আবরারের পরিবারকে আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, এই রায়ে ‘আস্থার প্রতিফলন’ ঘটেছে বলে মনে করছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। তারাও চান, অতি দ্রুত এই রায় কার্যকর হোক। রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে একদল শিক্ষার্থী বলেন, রায়ে চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে সকলের আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে।
তারা আরও জানান, আমরা এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি এবং আবরারের পরিবারের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আশাবাদ ব্যক্ত করছি যে, এই রায় শেষ পর্যন্ত বহাল থাকবে এবং এই রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। একই সাথে আমাদের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র শিক্ষক কাউকেই যেন রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বলি না হতে হয় এবং সকল ক্ষেত্রে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে।
এসময় তারা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক তিন আসামী, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মুজতবা রাফিদ ও মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিন্নানকে দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তা আমলে নিয়ে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। বুধবার (৯ ডিসেম্বর) আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করলেন আদালত।