সারা দেশে চিহ্নিত করা হচ্ছে হোম কোয়ারেন্টাইনদের

কামরুন নাহার | ০০:৩৫, মার্চ ২১ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ বিদেশফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে এখন থেকে তাদের হাতে কালি দিয়ে সিল মেরে চিহ্নিত করে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার থেকেই দেশের সকল বিমানবন্দরে অবতরণ করা প্রবাসী বাংলাদেশিদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করেই এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন থেকে ফ্লাইটগুলোতে যত বিদেশফেরত যাত্রী আসছেন তাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে যাদের করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে। আর যাদের তাপমাত্রা সন্দেহজনক মনে হচ্ছে না তাদের হাতে সিল মেরে নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় থাকতে বলা হচ্ছে। এ দিকে, বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তৃতির সম্ভাব্যতা এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সেনাবাহিনীকে দুইটি কোয়ারেন্টাইনের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। সেগুলো হলো- বিমানবন্দর সংলগ্ন হজ ক্যাম্প এবং উত্তরার দিয়াবাড়ি সংলগ্ন রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট কোয়ারেন্টাইন। বিদেশ থেকে দেশে আসার পর ফ্লাইট থেকে বিমানবন্দরে নেমেই যাত্রীদের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যেতে হবে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গকে বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় ইমিগ্রেশন শেষে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। হস্তান্তরের পর সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ সকল যাত্রীদের বিমানবন্দর থেকে কোয়ারেন্টাইনে স্থানান্তর, ডিজিটাল ডাটাএন্ট্রি কার্যক্রম, কোয়ারেন্টাইনে খাওয়া থেকে আনুষঙ্গিক সেবার ব্যবস্থা করা হবে। এ কাজে সেনাবাহিনীকে অন্যান্য স্বাস্থ্যসহ মন্ত্রণালয় সহায়তা করবে। এর আগে ১৪ মার্চ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইতালিফেরত ১৪২ জন যাত্রীকে উত্তরার আশকোনা হজ ক্যাম্পের অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইনে পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়। কিন্তু তারা সেখানে থাকতে অনীহা প্রকাশ করেন। তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা আসে, এটা শুনে ক্ষুব্ধ হন তারা। এ সময় হজ ক্যাম্পের প্রধান গেটে এসে বিক্ষোভ ও গেটে ধাক্কাধাক্কি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন এবং প্রশাসনের অবহেলার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন তারা। প্রবাসীদের অনেকেই দাবি করেন, হজ ক্যাম্পের ভেতরের পরিস্থিতি থাকার মতো নয়। করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরেছেন এমন ব্যক্তিদের ১৪ দিন বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও তা মানছেন না তারা। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যাচ্ছেন হাট-বাজারেও। প্রায় সব প্রবাসীদের অবস্থা একইরকম। আবার অনেক প্রবাসীই ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ সম্পর্কে কিছু জানেন না। এ বিষয়ে সচেতন নাগরিকরা বলছে, বিমানবন্দর থেকে তাদের একটি নির্দেশনা দিলেও এ সম্পর্কে তারা খুব একটা অবগত নন। এ কারণেই তারা অবাধে হাট-বাজারে যাচ্ছেন, চলছেন নিজেদের ইচ্ছা মতো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারির কথা বলা হলেও কার্যত তাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন বা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সেই রকমভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে না। উল্লেখ্য, দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত আরও তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের দুইজন পুরুষ, একজন নারী। এ নিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মোট ২০ জন। ইতোমধ্যে ৩ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। আর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃত্যু হয়েছে একজনের।