করোনা শঙ্কার মধ্যেও আজ তিনটি আসনে উপ-নির্বাচন

কামরুন নাহার | ০০:২৬, মার্চ ২১ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ নির্বাচনি সরঞ্জাম কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেও আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরগাট-৪ আসনের উপনির্বাচন। তবে ভোটারদের করোনা থেকে সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার কথা বলছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাস্তবে দেখা গেছে, ইসির ‘পর্যাপ্ত’ করোনা সুরক্ষা ব্যবস্থা হ্যান্ড স্যানিটাইজার, টিস্যু ও ব্যানারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে ভোটাররা বলছেন, করোনাভাইরাস একটি ছোঁয়াচে রোগ। এ থেকে বাঁচতে সরকার বলছে ঘরে থাকতে। এ অবস্থায় ভোট দিতে গিয়ে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে এর দায় কে নেবে? ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (এভিএম)। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে এই আসনের ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক মালামাল বিতরণ করা হয়। সেখানে সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি ভোট কক্ষের জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্ট্যাম্প প্যাড, পিতলের সিলমোহর, বল পয়েন্ট কলম, সুচ, মোমবাতি, টিস্যু, অমোচনীয় কালির কলম, গালা, হেসিয়ান ব্যাগ, সাদা কাগজ, ছুরি, সুতা, গামপট, দিয়াশলাই বক্স, স্ক্রু ড্রাইভার, ভ্যাসলিন, ছোট মখমলের কাপড়, করোনা প্রটেকশন টিস্যু ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এরমধ্যে ভোটারদের করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য রয়েছে, করোনা প্রটেকশন টিস্যু, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও একটি সচেতনতামূলক ব্যানার। আর ভ্যাসলিন ও ছোট মখমলের কাপড় দেওয়া হয়েছে ইভিএম মেশিনে যেসব ভোটারের আঙুলের ছাপ মিলবে না তাদের আঙুলে মখমলের কাপড় দিয়ে মোছানোর ও ভ্যাসলিন দেওয়ার জন্য। ঢাকা-১০ উপনির্বাচনের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘ভোটারদের বলবো, আপনারা ভোট দিতে আসুন। করোনাভাইরাস থেকে ভোটারদের সুরক্ষা দিতে আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে থাকবে একটি সচেতনতামূলক ব্যানার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও টিস্যু। ভোট দেওয়ার আগে-পরে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া প্রতিটি ভোট কক্ষে চার-পাঁচ জন স্বেচ্ছাসেবীও থাকবেন।’ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ভোটকক্ষে প্রায় চারশ’র মতো ভোটার থাকবেন। এসব ভোটারের জন্য ২০০ গ্রামের দুটি স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। কোনও ক্ষেত্রে এর পরিমাণ আরও বেশি বা কমও হতে পারে। সেই অনুযায়ী টিস্যুও দেওয়া হচ্ছে। তবে এমনিতে গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গেছে মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে তেমন কোনও উৎসাহ নেই। সেখানে এই করোনা ভাইরাসের মধ্যে কত শতাংশ ভোট পড়বে এই নিয়ে সবাই সন্দিহান রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে চাইলেও ভোট স্থগিত করা যায় না। কারণ, এতে ইসির অনেক অর্থ নষ্ট হতো। তবে ২৯ মার্চের চট্টগ্রামের নির্বাচন স্থগিত করা হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি থানার নির্বাচনি অফিসার বলেন, ‘সরকারি চাকরি করি। ফলে ইচ্ছা না থাকলেও নির্বাচনি ডিউটি করতে হবে। ভোটকক্ষে তো অনেক লোক আসবে, এটা কীভাবে নিশ্চিত করবো কে সুস্থ আর কে অসুস্থ? শুধু ভোটাররা নয়, আমরা নিজেরাও ভয়ের মধ্যে আছি। একমাত্র ভরসা আল্লাহ।’ গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘করোনার কারণে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হবে, আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও কম হবে।’ ঢাকা-১০ আসনের ঝিগাতলার একটি কেন্দ্রের ভোটার সাইফুল ইসলাম। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সাইফুল বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সরকারসহ ডাক্তাররা বলছেন জনসমাগম এড়িয়ে চলার জন্য। সেখানে কীভাবে কাল ভোট হচ্ছে সেটি আমার চিন্তায় আসে না। ভোটকেন্দ্রে তো শত শত মানুষ থাকবে। সেখানে কার শরীরে করোনা আছে আমি কীভাবে নিশ্চিত হবো। এমন তো নয় যে, সেখানে করোনা চিহ্নিতকরণ কোনও যন্ত্র আছে? তাহলে কেন মানুষ ভোট দিতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবে।’সাইফুল ইসলামের মতো ঢাকা-১০-এর আরেক ভোটার ব্যাংক কর্মকর্তা জহিরুল হক রাসেল। তিনি বলেন, ‘ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনও মাথাব্যথা আছে বলে আমার মনে হয় না। এরমধ্যে করোনা ঝুঁকি নিয়ে কেন মানুষ ভোট দিতে যাবে। আসলে ভোটারের ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনও চিন্তা আছে বলে মনে হয় না। যদি থাকতো তাহলে কীভাবে এই পরিস্থিতির মধ্যে তারা ভোটের দিন নির্ধারণ করে।’তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমি ভোট দিতে গিয়ে যদি আক্রান্ত হই (আল্লাহ না করুক) তার দায় কে নেবে? তখন আমার পরিবারকে কারা দেখবে? সরকার বা নির্বাচন কমিশন কি আমার চিকিৎসা বা পরিবারের দেখভালের ব্যবস্থা করবে? কেউ করবে না। সুতরাং আগে নিজের নিরাপত্তা তারপর ভোট।’