বিএম কলেজের ৬ একর জমি ‘বেদখল’

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৫৮, নভেম্বর ২৫ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মোকলেছুর রহমান মনি অভিযোগ করেন, কলেজ ক্যাম্পাসের জমি তদারকির অভাবে যে যেখান থেকে পেরেছে দখল করেছে। কলেজের আশপাশের অনেক মানুষ এই জমি দখল করেছে। বাউন্ডারি করে কলেজ ক্যাম্পাসের পরিধি কমিয়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। কাগজে-কলমে বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের জমির পরিমাণ ৫৮ দশমিক ৩৬৮ একর। এর মধ্যে মূল ক্যাম্পাসে জমির পরিমাণ ৪৩ দশমিক ১ একর। তবে সম্প্রতি ডিজিটাল ম্যাপিংয়ে ক্যাম্পাসে জমি পাওয়া গেছে ৩৭ দশমিক ৭১ একর। সেই হিসাবে ৫ দশমিক ৩৯ একর জমি বেদখল হয়েছে। জমি কারা কখন কীভাবে দখল করেছে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি কলেজের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ কমিটিও। মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত প্রতিষ্ঠিত কলেজ ক্যাম্পাসটির মূল্যবান জমি অবশ্য শিগগিরই উদ্ধার করা হবে বলে জানিয়েছে কমিটি। কলেজ প্রশাসন জানিয়েছে, কলেজের দখলে থাকা জমির পরিমাণ কম হওয়া নিয়ে তারা চিন্তিত। এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। কলেজের জমি অন্যের দখলে চলে যাওয়া এবং দীর্ঘদিনেও এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক শিক্ষার্থী ও সচেতন মহল। কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মোকলেছুর রহমান মনি অভিযোগ করেন, কলেজ ক্যাম্পাসের জমি তদারকির অভাবে যে যেখান থেকে পেরেছে দখল করেছে। কলেজের আশপাশের অনেক মানুষ এই জমি দখল করেছে। বাউন্ডারি করে কলেজ ক্যাম্পাসের পরিধি কমিয়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি কলেজের ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক হলের পুকুরের পাশে একটি ভবন তোলার সময় কলেজের বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে জমি দখল করা হয়। যে স্থানটিতে ভবন করা হচ্ছে সেটিও কলেজের জমি হিসেবে আমরা চিনি। ওটা কলেজের পুকুর ছিল। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জমিটি দখল করে এখন ভবন নির্মাণ তো করছেই, পাশাপাশি কলেজের বাউন্ডারি ভেঙে জমি দখল করা হয়েছে কয়েক ফুট। ‘এ রকম বাকসু ভবনের আশপাশ থেকেও হয়েছে। অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাসের আশপাশেও একই অবস্থা। এ রকমটা চলতে থাকলে কেমনভাবে কী হবে? ক্যাম্পাসের পরিধি কমতে থাকলে কলেজের ভবিষ্যৎ কী? আমরা কলেজ ক্যাম্পাসের ভূমি দখলমুক্ত করতে কলেজ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ সাবেক শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রমৈত্রীর সহসভাপতি শামিল শাহরোখ তমাল বলেন, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরণের সময় সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য কলেজ থেকে কিছু জমি দেয়া হয়। তার মানে এটা নয় যে, ৬ একর জমি দেয়া হয়েছে। ‘সামান্য কিছু জমি জনস্বার্থেই কলেজ কর্তৃপক্ষ সে সময় দিয়েছিল। তাহলে কথা হচ্ছে, বাকি জমি কি আকাশে ভেসে গেল। ক্যাম্পাসের জমি তো রাক্ষুসেরা খেতে পারে না। জমি গেল কোথায়? এর হদিস চাই।’ কলেজের জমি দখলকারীদের পরিচয় প্রকাশের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন হয়েছে এই কলেজ থেকে। এই কলেজ থেকে ছাত্র-শিক্ষকরা সংগঠিত হয়ে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। সেই কলেজ ক্যাম্পাসের জমি দখলকারী সুশীলদের মুখোশ উন্মোচন করে দখলমুক্ত করা হোক।’ সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ‘শুনেছি কলেজের জমি দখলের পেছনে সাবেক অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে কয়েকজন শিক্ষকের হাতও রয়েছে। এই ধরনের কাজ চুনোপুঁটিরা তো করতে পারে না, যে যে সময় কলেজের অধ্যক্ষ ছিল, সে সেই সময় বিশেষভাবে উপকৃত হয়ে এই দখলে সহায়তা করতে পারে বলে আমার ধারণা। ‘কেননা কলেজের জমি দখল করা হচ্ছে, আর কলেজের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়াটা আমার কাছে ভৌতিক মনে হচ্ছে। সুবিধা পেয়েই হয়তো সে সময়কার কলেজ কর্তৃপক্ষ দখলে সহায়তা করেছে। শুনেছি একজন সাবেক অধ্যক্ষ ক্যাম্পাসের জমি নিজের দাবি করে বাড়িও তুলেছেন। সেখানেই তার স্থায়ী ঠিকানা ও বসবাস।’ গবেষক আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, ‘ক্যাম্পাসের জমি উধাও ঠিক আছে, তবে কলেজের মূল জমি নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। নগরের বিভিন্ন স্থানে কলেজের জমি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সঠিক নজরদারির অভাবে এই জমিগুলো দখল করে অনেকেই ব্যবহার করছে। ‘এ ছাড়া ক্যাম্পাসের জমি দখল হয়েছে মূলত চারপাশ থেকে। এই জমি উদ্ধার করতে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি, তা না হলে সম্ভব নয়।’ ব্রজমোহন কলেজের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক শাহরিয়ার কিবরিয়া বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমিও অবাক। ক্যাম্পাসের জমি কোথায় গেছে সেটার সদুত্তর আমাদের কাছেও নেই। কাগজে-কলমে যেখানে ক্যাম্পাসের জমি ৪৩ দশমিক ১ একর, সেখানে ডিজিটাল ম্যাপিংয়ের পর এই হিসাব মিলছে না। ‘ডিসেম্বরে আমরা জমি পুনরায় পরিমাপ করব, এর জন্য একজন ভালো সার্ভেয়ারও ঠিক করেছি। এতে যদি দেখি আমাদের জমি কেউ দখল করেছে, তাহলে সে যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন, অধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলে মামলা থেকে শুরু করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘জমি উদ্ধারে এরই মধ্যে আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। জমি ফের পরিমাপ করার পর আমরা কঠোর অবস্থানে যাব।’