ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে মিল-কারখানার লাখো শ্রমিক

কামরুন নাহার | ০০:১৫, মার্চ ২১ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই জনসাধারণের চলাচল ও হাসপাতালগুলোয় বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখতে শুরু হয়েছে তৎপরতা। কিন্তু বরিশালে প্রতিদিন মিল-কারাখানায় লাখো মানুষ ঝুঁকি নিয়ে অবাধে কাজ করায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশালের সকল মিল-কারখানা গুলো চালু রয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল বিসিকে ৫০টির বেশি মিল-কারখানা চালু রয়েছে। সেখানে প্রতিনিয়ত লাখো শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি একেবারে উপেক্ষিত থাকায় শঙ্কা বাড়ছে। শ্রমিকরা বলছেন, তাঁরা বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে কাজ করেন। কাজের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত শ্রমিকরা গণহারে কাজ করে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যদি কোনোভাবে করোনাভাইরাস বহনকারী কেউ শ্রমিক হন, তাহলে দ্রুত অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আছে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ভাইরাস ছড়িয়েছে প্রায় ১৮৩ টি দেশে। করোনাভাইরাসের হতাহতের পরিসংখ্যান করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৫৪ হাজার ৬৫৪ জন, মারা গেছেন ১০ হাজার ৪৪০ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮৯ হাজার ৭০ জন। মিল-কারখানা মালিকদের সূত্রে জানায়, এখনো মিল-কারখানা বন্ধের কোন নির্দেশনা আসেনি। ব্যবসায়ীদের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করা হচ্ছে। সকলে সচেতন ও সতর্ক থাকলে করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। বরিশাল বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জালিশ মাহামুদ বলেন, এখন পর্যন্ত মন্ত্রনালয় থেকে মিল-কারখানা বন্ধের কোন নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। শ্রমিকদের দাবি সকল রুম পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য আগে জীবাণুনাশক স্প্রে করা। শ্রমিকদের শৌচাগারগুলোকে পরিচ্ছন্ন এবং সেখানে পর্যাপ্ত পানি ও সাবানের ব্যবস্থা রাখা। শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা। বিদেশফেরত কোন ব্যক্তিকে মিলে ঢুকতে না দেয়া। করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতা বিষয়ে মিল-কারখানায় মাইকিং, সকলকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচার ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা প্রচার করা। শ্রমিকরা বলছেন, মিল-কারখানাগুলো নির্দেশনা মেনে চলছে না। আগের মতোই সবকিছু চলছে। শৌচাগারগুলো অপরিচ্ছন্ন, পর্যাপ্ত সাবান নেই। কাজের রুম পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুনাশক স্প্রে দেওয়ার কথা থাকলেও সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। শৌচাগারগুলোর সেখানে সাবান তো দূরের কথা পর্যাপ্ত পানিরও ব্যবস্থা নেই। বরিশাল বিসিকে কর্মরত একাধিক শ্রমিক বলেন, ‘শৌচাগারে কোনো রকম সাবান আছে। তবে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্ন। এক রুমে অনেক শ্রমিক ঠাসা। মিলে ঢোকার সময় হ্যান্ড স্প্রে দেওয়া হয়নি। সবকিছু আগের মতোই চলছে। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করে না’ এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন, সবাইকে জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং সাবধান থাকতে হবে। সকল মিল-কারখানা মালিকদের সচেতন হয়ে সকল দিক নির্দেশনা মানতে হবে।